সিলেটের ১২৭ বছরের পুরোনো মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকটসহ অন্যান্য সংকটের যে চিত্র প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, তা উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে ১৬তম আর সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম অবস্থানে থাকা ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের এমন দুর্দশা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এমসি কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১৪ হাজার কিন্তু আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ৪৫০ জনের। সাড়ে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বড়জোর ৩ হাজার শিক্ষার্থীর নিজস্ব বাসা আছে। বাকি ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে মেসবাড়ি ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁদের খরচ বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি বাস, যার প্রতিটিতে রয়েছে ৫২টি আসন। এত শিক্ষার্থীর যাতায়াতের জন্য এই তিনটি বাস মোটেই যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া শিক্ষকসংকটও রয়েছে। বর্তমানে ১৩৮টি পদের বিপরীতে ১২৭ জন শিক্ষক কর্মরত। শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পরীক্ষা চলাকালে প্রায়ই কলেজের ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়। মেডিকেল সেন্টার থাকলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক নেই। সেমিনার থাকলেও নেই পর্যাপ্ত বই ও পড়ার সুব্যবস্থা। প্রতিটি বিভাগে দু-একটি করে শৌচাগার থাকলেও সেগুলো মেয়েদের ব্যবহারের অনুপযোগী। এ ছাড়া খাওয়ার পানির সুবিধা পুরো কলেজেই নেই। নেই কোনো ক্যানটিন। শিক্ষার্থীদের তাই বাইরে থেকে খাবার ও পানি কিনে আনতে হয়। কলেজের একমাত্র মিলনায়তনটি ব্যবহারের অনুপযোগী। কলাভবনের দেয়াল জীর্ণ হয়ে পড়েছে।
এত সংকট নিয়ে একটি কলেজ চলছে কী করে? এসব দেখার কি কেউ নেই? এ ধরনের সংকট দীর্ঘদিন ধরে যদি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজ করে, তাহলে সেখানকার শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। দেশের একটি নামকরা কলেজের এসব সংকট প্রমাণ করে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো মাথাব্যথা নেই। থাকলে এমসি কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কষ্ট ও ভোগান্তি নিয়ে তারা এমন ঔদাসীন্য দেখাতে পারত না।
তবে এ ধরনের সমস্যা যে শুধু এমসি কলেজে বিরাজ করছে তা নয়, দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ রকম আবাসনসংকটসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। শিক্ষকসংকটে ভোগা তো এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি সাড়ে ৩ হাজার ছাত্র ও দেড় হাজার ছাত্রীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত ও পরিবহনসংকট দূর করার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। আমরা আশা করব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ অনুরোধে দ্রুত সাড়া দেবে। পাশাপাশি কলেজটিসহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসংকট দূর করার ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।