সহায়তা চেয়ে উল্টো বিপদে

সম্পাদকীয়

দেশে সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা চালু থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলোর অনায়াসপ্রাপ্তি দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় পরিষেবাগুলোর ওপর জনগণের আস্থা থাকছে না। কিন্তু এই পাইকারি অনাস্থার মধ্যেও বাংলাদেশ পুলিশের পরিচালিত ‘জাতীয় জরুরি সেবা হেল্প ডেস্ক ৯৯৯’ একটি আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছে। অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের কল পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিচ্ছে এই হেল্প ডেস্ক। দুর্ঘটনায় সহায়তা, বাল্যবিবাহ রোধ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদিতে ৯৯৯ প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে তারা। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পাচ্ছে মানুষ।

এই সেবার ওপর সাধারণ নাগরিকদের যে আস্থা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, প্রান্তিক পর্যায়ে যে কর্মকর্তারা এই পরিষেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকেন, তাঁদের কারও বিরুদ্ধে যখন ‘আমানতের খিয়ানত’ করার অভিযোগ ওঠে, তখন তা উদ্বেগের কারণ হয়ে পড়ে।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় তেমনই উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছে। প্রথম আলোর খবর বলছে, উপজেলার জুনিয়াদাহ এলাকার ফয়জুল্লাহপুর গ্রামে পরপর তিনটি গুলির শব্দ পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চেয়েছিলেন আসাদুল হক নামের এক স্থানীয় যুবক। হেল্প ডেস্ক তাঁর সঙ্গে ভেড়ামারা থানার ডিউটি অফিসারের যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ঘটনাস্থল কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্পের আওতায় হওয়ায় ডিউটি অফিসার ভুক্তভোগী যুবককে সহায়তা দেওয়ার জন্য তাঁর নাম ও মুঠোফোন নম্বর কুচিয়ামোড়া পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেনকে দেন। কিন্তু এসআই জাহাঙ্গীর সহায়তা দেওয়ার বদলে উল্টো সন্ত্রাসীদের কাছে আসাদুলের তথ্য জানিয়ে দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাহায্য চাওয়া আসাদুলের বাড়িতে হামলা চালায় ও তাঁকে কুপিয়ে আহত করে। পরে তিনি ওই এসআইসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোর প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ বিষয়ে নিউজ করার দরকার নেই। যারা এসব করেছে, তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার লোক।’

এটিকে নিতান্ত স্থানীয় পর্যায়ের ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ কম। কারণ, এর সঙ্গে ৯৯৯-এর মতো একটি আস্থাশীল কার্যক্রমের স্বচ্ছতার প্রশ্ন জড়িত। ‘কোনো প্রভাবশালী নেতার লোক’-এর কারণে এ কার্যক্রমের আস্থায় কুঠারাঘাত বরদাশত করা সমীচীন হবে না। ফলে এ ঘটনার নির্মোহ তদন্ত দরকার।