সরকার কা মাল নলজুরমে ঢাল

সম্পাদকীয়

বাংলার আর দশটা নদী থেকে নলজুরের গল্পটা আলাদা নয়। একদা যৌবনে ছিল এ নদ, বর্ষায় দুকূল ভাসাত। নদ দিয়ে তরতর করে বয়ে যেত নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। তারপর আস্তে আস্তে নলজুর মরেছে, ভরাট হয়েছে দুই ধার। পার বেদখল হয়ে গড়ে উঠেছে সরকারি–বেসরকারি নানা স্থাপনা।

অনেক দিন ধরেই সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার এ নদ খননের দাবি করে আসছিলেন এলাকাবাসী, এত দিনে তাঁদের দাবির প্রতি সাড়াও দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১৮ জানুয়ারি থেকে নদ খনন শুরু করেছে তারা। চলছে বাদাউড়া থেকে এরালিয়া বাজার পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার নদের খনন। আশা করা হচ্ছে, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তারপরও খুশি নন এলাকাবাসী। কেন? খনন করে নদটাকে যে খাল বানানোর উপক্রম করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড!

এলাকাবাসী আশা করেছিলেন, খননের পর আগের চেহারা ফিরে পাবে নলজুর। আগের কথা না-হয় বাদই গেল, এখনো নদটি জায়গাভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট চওড়া। অথচ খননের পর নদের প্রস্থ পাওয়া যাচ্ছে এখন ৫০ ফুট, গড়ে ২০০ ফুট জায়গাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে নলজুরকে এখন নদ বলাটাই দুষ্কর হয়ে পড়ছে, এটাকে এখন খাল বলাই বরং শ্রেয়। এ ছাড় এক অর্থে দুই পারের দখলদারদের একধরনের বৈধতা দেবে। এ রকম ৪৯ জন দখলকারীর বিরুদ্ধে উচ্ছেদের মামলা করে রেখেছে প্রশাসন।

নলজুরের এ অবৈধ দখলমুক্ত না করে আধখেঁচড়াভাবে কাজটা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে এখন নতুন করে এ ৫০ ফুট জায়গা দখলেও উৎসাহিত হবে লোকজন। তার চেয়ে বড় কথা, যেটুকু–বা খনন করা হচ্ছে, তা–ও আবার তুলে নদের পাশেই জমা করা হচ্ছে। সামনেই বর্ষা। ঢলে যেখান থেকে এসেছে, আবার ঠিক সেখানেই গিয়ে জমা হবে কাটা মাটি। মাঝখান থেকে ঠিকাদারের পকেটে যাবে জনগণের পাঁচ কোটি টাকা। আর এভাবেই বিখ্যাত সেই প্রবাদকে সত্য করে সরকারের মাল নলজুর দরিয়ায় চলে যাবে। বাস্তবে কবে আমরা এ প্রবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারব? কবে আমরা এটাকে বইয়ে বন্দী করতে পারব?