আজ ২৫ ডিসেম্বর। মহান যিশুর জন্মের পবিত্র ক্ষণকে স্মরণ করতেই পৃথিবীজুড়ে বড়দিন উদ্যাপিত হচ্ছে। বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্ম হয়েছিল যিশুর, পরবর্তীকালে তিনিই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। হিংসা-বিদ্বেষ, পাপ-পঙ্কিলতার বদলে মানুষকে ভালোবাসা, করুণা, পবিত্রতা ও সুন্দরের পথ দেখিয়েছেন তিনি। মানুষকে সন্ধান দিয়েছেন মুক্তির। তাঁর অনুসারী কোটি কোটি মানুষ তাঁরই বন্দনা গাইবে আজ।
খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুর জন্মোৎসব গোটা বিশ্বে নানা মত-জাতিধর্ম–নির্বিশেষে উদ্যাপিত হয়। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা দেশগুলোতে বাজার সরগরম হয়ে ওঠে, লম্বা ছুটি নিয়ে মানুষ ঘুরতে বেরিয়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয় দীর্ঘদিন পর। তবে দুই বছর ধরে বড়দিন উদ্যাপিত হচ্ছে ভিন্ন এক বাস্তবতায়। আগ্রাসী করোনা মহামারিতে মানুষের মৃত্যু ম্লান করে দিয়েছে বড়দিনের আনন্দ। শোক আর বেদনায় বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়ে মানুষ। মাঝখানে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে এবার বড়দিনের উৎসব নিয়ে মানুষ আশাবাদী হয়ে ওঠে। কিন্তু অমিক্রন ধরনের সংক্রমণে আবার নেমে এল শঙ্কার কালো ছায়া। অনেক দেশ করোনা-পরবর্তী ধাক্কা সামলাতে ব্যস্ত। স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, অর্থনীতি—সবকিছুই ধসিয়ে দিয়েছে মহামারি। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বিশ্ব সম্প্রদায়।
অমিক্রনের সংক্রমণে অনেক দেশ বড়দিনের উৎসবে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবু গির্জায় গির্জায় বেজে উঠবে ঘণ্টাধ্বনি, সমবেত সংগীত ও প্রার্থনার সুললিত সুর। সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছড়িয়ে পড়বে আনন্দ ও খুশি। বাহারি আলোকসজ্জা ও ক্রিসমাস ট্রিতে আলোকিত হবে ঘরবাড়ি। রাতের অন্ধকারে শিশুদের জন্য ঘরের দরজার সামনে উপহার রেখে যাবেন সান্তা ক্লজ। যাবতীয় বিদ্বেষ, হানাহানি, অশান্তি, সর্বোপরি মহামারি থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনায় নত হবে মানুষ। যিশু তো এসেছিলেন পরিত্রাণের দূত হয়েই।
যিশু যে মানবিক আদর্শের বাণী প্রচার করেছেন, জাতিধর্ম–নির্বিশেষে সবার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। মানবতার সংকটপূর্ণ মুহূর্তে তা যেন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। করোনার ধাক্কায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। খাদ্যসংকটে ভুগছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। দুর্ভিক্ষের বিষয়ে বারবার সতর্কবার্তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এমন পরিস্থিতিতে যিশুর সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার শিক্ষা হোক সবার জন্য পাথেয়। পৃথিবীর বুকে আবার স্বস্তি ফিরে আসুক। যাবতীয় অশান্তি, যাতনা ও হাহাকার থেকে মুক্তি পাক মানুষ। এই বড়দিনে এটিই প্রত্যাশা। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।