বিদ্যালয় যখন আনন্দ ভুবন

সম্পাদকীয়

করোনা মহামারির ধাক্কায় শিক্ষা খাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ সময়ে অর্থনৈতিক বিপর্যস্ততায় পড়ে অনেক শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে, অনেক ছাত্র সংসারের হাল ধরতে অল্প বয়সেই লেগে পড়েছে কাজে। শুধু টাঙ্গাইলেই ১০ হাজার শিক্ষার্থী স্কুলে ফেরেনি। সম্প্রতি প্রথম আলোর এ প্রতিবেদনে বোঝা যাচ্ছে, একটি জেলার এ অবস্থা হলে বাকি জেলাগুলোর কী চিত্র। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেও ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ইউনিয়নে দেখতে পাই ভিন্ন দৃশ্যপট। সেখানকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে দেখা গেছে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

হরিপুর উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির নাম চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেটির মাঠে সাজানো সারি সারি খেলার উপকরণ। রংবেরঙের ফুলের গাছের মধ্যে নানা ধরনের প্রাণীর ভাস্কর্য। দূর থেকে দেখে মনে হয় কোনো বিনোদনকেন্দ্র। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে বিদ্যালয়জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এমনই মুগ্ধকর পরিবেশ। ২০০১ সালে ইউনিয়নের বহরমপুর বাজারে এরফান আলী নামের চা-নাশতার এক দোকানদার বাবার দেওয়া জমিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীও সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সেই উদ্যমী তরুণ স্নাতক পাস করেন। স্বপ্ন দেখেন প্রতিষ্ঠান নিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার। সফলতাও আসে। বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারি হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

সে সময় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কম দেখে এরফান আলী স্থানীয় সুধীজন ও অভিভাবকদের নিয়ে ‘মিড ডে মিল’ চালু করলেন। অভিভাবকেরা এর জন্য মুষ্টি চাল দিয়ে সহায়তা করেন। ছয় বিঘার পুকুর, দুই বিঘা জমির ব্যবস্থাও হলো। সেখানে হাঁস পালন ও সবজি আবাদ থেকে আসা আয় যুক্ত হতো মিড ডে মিলের তহবিলে। এর ফলে শিক্ষার্থীর গড় উপস্থিতি বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ শতাংশে। ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বয় সভায় এই স্কুলের মিড ডে মিলের মডেলটি আলোচনায় আসে। এরপর অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে চরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড ডে মিলের এই ধারণা অনুসরণ করতে বলা হয়।

চরভিটা বিদ্যালয়ের সুনাম এখন দেশজুড়ে। প্রতিষ্ঠানটি পেয়েছে নতুন অবকাঠামো। বিভিন্ন খেলনার পাশাপাশি বিনোদনের জন্য পার্কও স্থাপন করা হয়। তবে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকসংকট রয়েছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র চারজন শিক্ষক। আমরা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের প্রতি এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি দ্রুত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকসংকট ঘুচে যাবে।