বাল্যবিবাহ বন্ধ

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক সময়ে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, অবশ্য কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই প্রবণতা যে বাড়বে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত পাঁচটি বাল্যবিবাহ বন্ধের খবর প্রকাশ পেয়েছে, যদিও সব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় না। বাল্যবিবাহ রোধে ২০১৭ সালে পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, কোনো নারী ১৮ বছরের আগে এবং পুরুষ ২১ বছরের আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে বিবাহসংশ্লিষ্টদের জেল-জরিমানা করা হবে।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টায় পাঁচটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হলেও কত বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে, সেই খবর আমাদের জানা নেই। এর মধ্যে নাটোরের গুরুদাসপুরে টিকোরী গ্রামে নবম শ্রেণির মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা মো. আবুল হোসেনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় দক্ষিণ নিশ্চিন্তপুর গ্রামে একটি বাল্যবিবাহের আয়োজন পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। জামালপুরের বকশীগঞ্জে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে পড়ানোর অভিযোগে বিয়ের কাজি রফিকুল ইসলামকে ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভুয়া জন্মসনদ ব্যবহার করে কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় ভোলার চরফ্যাশনে মা নাজমা বেগমকে এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের রামুর হাজীপাড়া এলাকায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাল্যবিবাহ পণ্ড করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

কোভিড পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, বাল্যবিবাহের সংখ্যা বাড়বে। দেশের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সীমাহীন অর্থনৈতিক সংকট, কিশোরীর নিরাপত্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে এই প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তাঁদের। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, জুন মাসে ৪৬২টি কন্যাশিশুর বিয়ে হয়, বন্ধ হয় ২০৭টি। এর আগে মে মাসেও ১৭০টি বাল্যবিবাহ হয়, বন্ধ হয় ২৩৩টি।

বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। আর ২২ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছর বয়সের আগে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছিলেন।

করোনা পরিস্থিতিতে নতুন নতুন অসংখ্য সমস্যার মধ্যে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সরকারের মনোযোগ কিছুটা সরে গেছে বলে মনে হয়। যদিও এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়ে উঠেছে দেশের অনেক এলাকায়। এখন দরকার পারিবারিক সচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন। যে হারে বাল্যবিবাহ বাড়ছে, তাতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার।