পদ্মার দুই ফেরিঘাটের মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন হয় সবচেয়ে বেশি। ফলে এ ফেরিঘাটে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা জরুরি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে যাত্রীরা হরহামেশা জুয়াড়ি, ছিনতাইকারী ও পকেটমারের শিকার হচ্ছেন।
প্রথম আলোর গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধির খবরে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম নৌপথ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া অনেকটা অরক্ষিত। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার যাত্রী পারাপর হয়। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ পণ্যও পরিবহন করা হয় এ ফেরিতে। এর নিরাপত্তার দায়িত্ব ঘাট কর্তৃপক্ষ তথা নৌ পুলিশের। কিন্তু ফেরিতে কোনো নৌ পুলিশ থাকে না। এ সুযোগে অপরাধী চক্র সেখানে জুয়ার আসর বসায়, যাত্রীদের টাকাপয়সা ছিনতাই করে এবং পকেট মারে। সম্প্রতি অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে বলে যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রথমে জুয়াড়িরা কিছু সাজানো খেলোয়াড়কে নিয়ে জুয়ার আসর বসিয়ে দেখান যে খেললেই লাভ। জুয়ায় খেলোয়াড়েরা যে টাকা বিনিয়োগ করেন, অল্প সময়ে তার কয়েক গুণ টাকা লাভ করেন। এভাবে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে তাঁদের টাকাপয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন জুয়াড়িরা। কেউ প্রতিবাদ করলে জুয়াড়িরা তাঁর ওপর সংঘবদ্ধ আক্রমণ চালান। ভয়ে অন্য যাত্রীরাও প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। এ ছাড়া নদীর পাড়ে নোঙর করা বাল্কহেড-এ ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও অহরহ ঘটছে।
ফেরিতে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না থাকার কারণ নৌ পুলিশের অভাব। নদীর দুই পারে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে মাত্র ১৭ জন করে পুলিশ সদস্য আছেন। যেখানে বিপুলসংখ্যক যাত্রী আসা-যাওয়া করে, সেখানে ঘাটে ১৭ জন নৌ পুলিশ নিয়োগ খুবই অপ্রতুল। সমস্যাটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। তারপরও জনাকীর্ণ এ ঘাটে ফেরি চলাচল করছে কোনো পুলিশি পাহারা ছাড়াই। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যেখানে ১৬-১৭টি ফেরি চলাচল করে, সেখানে নৌ পুলিশের ১৭ জন সদস্য নিয়োগ কেবল অপর্যাপ্ত নয়, অবাস্তবও।
ঘাটের নিরাপত্তা প্রয়োজন আছে স্বীকার করি। কিন্তু ফেরিতে নিরাপত্তা দেওয়া আরও বেশি জরুরি। যে ঘাট থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা আয় করে, সেই ঘাটের যাত্রীদের নিরাপত্তা কেন দেবে না তারা? অবিলম্বে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নৌ পুলিশের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নদীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হোক।