একটি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয় যাত্রীদের সুবিধার জন্য। তারা ট্রেনে চড়ার আগে প্ল্যাটফর্মে বসে অপেক্ষা করে। কিন্তু ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে যেন গরু–ছাগল চরানোর জন্য। সোমবার প্রথম আলোর এক খবর অনুযায়ী, আঠারবাড়ি রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও রেললাইন গবাদিপশুর বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম চত্বরে সব সময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে গবাদিপশুর মলমূত্র। মলমূত্রের উৎকট গন্ধে সেখানে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের নাকে সব সময় রুমাল চেপে রাখতে হয়। একটি প্ল্যাটফর্মের এমন চিত্র অগ্রহণযোগ্য। প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও রেললাইনেও গরু চরানো হয়। রেললাইনের পাশে খুঁটি গেড়ে তাতে গরু বেঁধে মালিকেরা চলে যান। পশুগুলো রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে ঘাস খায়। ফলে স্টেশন দিয়ে কোনো ট্রেন অতিক্রম করার সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া নান্দাইল-কেন্দুয়া সড়কে থাকা রেলক্রসিংটি ট্রেন চলাচলের সময় অরক্ষিত থাকে। সেখানে কোনো গেটম্যান নেই।
কোনো রেলস্টেশনের দেখভালের দায়িত্ব থাকে স্টেশনমাস্টার ও রেল পুলিশের ওপর। কিন্তু আঠারবাড়ি রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার ও রেল পুলিশ—কেউ যে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। এ ব্যাপারে স্টেশনমাস্টার মো. জহিরুল ইসলামের বক্তব্য রীতিমতো হতাশাজনক। তিনি বলেছেন, এসব গবাদিপশুর মালিক স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা যদি সচেতন না হন, তাহলে তাঁর একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
তবে শুধু আঠারবাড়ি রেলস্টেশন নয়, দেশের বেশির ভাগ রেলস্টেশনেই কমবেশি অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। কয়েক বছরে দফায় দফায় টিকিটের দাম বাড়লেও রেলওয়ে ও স্টেশনে সেবার মান বাড়েনি। অধিকাংশ রেলস্টেশনে হকার, ভিক্ষুক, ফেরিওয়ালা, ছিঁচকে চোর ও হেরোইনসেবীদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। প্রায় সব স্টেশনের শৌচাগারের অবস্থা শোচনীয়। অনেক প্ল্যাটফর্মে দেখা যায় খাবারদাবার, চা–সিগারেটের দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানের কারণে প্ল্যাটফর্ম অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে। কিন্তু পরিষ্কার করার কেউ নেই। স্টেশনগুলোয় রেলওয়ে পুলিশের ভূমিকাও নীরব ও নির্বিকার।
রেলপথ মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে এসব অব্যবস্থাপনা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। একটি রেলওয়ে স্টেশনে ন্যূনতম কী কী সেবা জোগানো হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। সে অনুযায়ী সেবা না মিললে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানও সংযোজন করতে হবে। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের দিকেও রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নজর দিতে হবে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন দুই হাজারের বেশি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসব লেভেল ক্রসিংয়ের বেশির ভাগেরই প্রতিবন্ধক কিংবা গেটম্যান নেই। যে কারণে এগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়কে রেলপথের সম্প্রসারণসহ সেবার মান বাড়ানোর দিকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি জননিরাপত্তার স্বার্থে লেভেল ক্রসিং ব্যবস্থাপনায় নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।