মালিবাগ ও গুলিস্তানে পুলিশকে টার্গেট করে দুটি বোমা হামলার ঘটনা আমাদের আবার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি তৎপরতার বিপদ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এটাও লক্ষণীয় যে সেই আগের কূটতর্ক-আইএস দেশে আছে কি নেই, সেটাও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের ওপর দুটি হামলার ঘটনারই দায় স্বীকার করেছে আইএস। কিন্তু এটা অস্বস্তিকর যে গুলিস্তান ও মালিবাগ হামলার বিষয়ে তদন্তে তেমন কিছু বের হয়ে আসেনি।
সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানের জবাবে পুলিশ যা বলছে, তাতে কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলে না। রাজধানীকে সিসিটিভির কভারেজে আনার বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এর আগে নাগরিকদের আশ্বস্ত করেছিল। অথচ গুলিস্তান ও মালিবাগে দুটি হামলার ঘটনা যখন ঘটল, তখন জানা গেল, সেসব ক্যামেরা অচল ছিল। সে কারণে এই ধারণা নাকচ করা যায় না যে হামলাকারী গোষ্ঠীর পরিচয় যা-ই হোক, তারা পুলিশের নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের দুর্বলতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারে। জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কিছুটা নির্লিপ্ততা বা আত্মতুষ্টি এসে গেছে কি না, সেই প্রশ্নও এই ঘটনা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।
কলম্বোয় সাম্প্রতিক রক্তক্ষয়ী হামলার পরে বিশ্ববাসী অবাক হয়ে জেনেছে যে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আগাম গোয়েন্দা তথ্য জানার পরও উপযুক্ত নিরাপত্তা রক্ষাকবচ নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেছেন যে টানা দীর্ঘদিন শান্তিভঙ্গের কোনো কারণ না ঘটার কারণে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে একটা শৈথিল্য এসেছিল। এর প্রাসঙ্গিকতা এখানেই যে বাংলাদেশকে জঙ্গি সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করতে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও সংস্থাগুলো অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে এবং করে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দীর্ঘদিন শান্তিতে বাস করার সুযোগে কোনো রকম দুর্বলতা বা অসাবধানতা তৈরি হচ্ছে কি না।
সৌভাগ্যক্রমে মালিবাগ ও গুলিস্তানের ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেনি। কিন্তু দুটি ঘটনায় নারীসহ ছয়জন পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার ঘটনাকে হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই। দুটি ঘটনাকেই প্রতীকী হিসেবে দেখলে এটা অনেকটাই স্পষ্ট যে হামলাকারীরা রাজধানীতে তাদের সক্রিয় উপস্থিতি এবং নির্বিঘ্নে হামলা চালানোর সামর্থ্য প্রমাণ দিতে পেরেছে। তারা দেখাতে পেরেছে যে জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সফল হলেও অনেক ফাঁক-ফোকর এখনো রয়ে গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন যে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতেই মালিবাগের হামলা হয়।
কিন্তু যা নিয়ে পুলিশের ব্যর্থতা স্বীকার করা উচিত, তা হলো মালিবাগের বিস্ফোরণের জায়গাটি নিরাপত্তাগতভাবে সংবেদনশীল। স্পেশাল ব্রাঞ্চের দপ্তর অন্যতম কেপিআই বা কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন। এর ফটকের ৩০ গজের মধ্যে পুলিশের টহল ভ্যানে হামলাটি চলে। এরপর এখন আমরা জানতে পারি প্রায় তিন মাস আগেই সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে পড়ার পরে সেটা প্রতিস্থাপনে ঢিমেতালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ফটকে বা সামনের রাস্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে এ ধরনের বিলম্ব বা শৈথিল্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এখানে কোনো না কোনো পর্যায়ে গাফিলতির বিষয়টি স্পষ্ট।
কর্মকর্তারা বলেছেন, তাঁরা দুটি হামলার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মাত্রা খতিয়ে দেখবেন। হামলাকারীদের পরিচয় যা-ই হোক, তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করা সম্ভব হলেই কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তার সার্থকতা খুঁজে পেতে পারে। এই দুটি হামলা যে মানুষের মধ্যে নতুন করে একটা নিরাপত্তাহীনতার অভাব তৈরি করবে, তাতে সন্দেহ নেই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা নির্মূল বা দেশে আইএস নেই, অথচ হামলা চলল, তাতে সান্ত্বনা নেই।