থানায় সার্বক্ষণিক নজরদারি

প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকায় প্রতিকারকামী মানুষের থানায় হয়রানি ও নাজেহাল হওয়ার খবর ছাপা হয়। এটি আইনের শাসনের অন্তরায়। মানুষ যদি নির্বিঘ্নে প্রতিকারই চাইতে না পারে, তাহলে ন্যায়বিচার পাবে কীভাবে?

থানায় প্রতিকারপ্রার্থীদের হয়রানি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তর আলোচনা হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নানা রকম নির্দেশনাও আসে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সেই নির্দেশনা কার্যকর হয় না। এই অবস্থায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এস তানভীর আরাফাতের উদ্যোগটি প্রশংসনীয় বলে মনে করি। প্রথম আলোর কুষ্টিয়া প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, জেলার থানাগুলোর ভেতর কী হয়, সেটা নিজ কার্যালয় থেকেই ভিডিও এবং শব্দপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেখা ও শোনার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় পুলিশের সাতটি থানা রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতিটি থানার ডিউটি কর্মকর্তার কক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা পুলিশ সুপারের কক্ষে থাকা কম্পিউটার ও মুঠোফোনে সংযুক্ত করা হয়। এতে ২৪ ঘণ্টায় যেকোনো সময় এসপি থানাগুলোর কার্যক্রম সরাসরি দেখতে পান। সংশ্লিষ্ট থানার ভেতরে কী হচ্ছে, তা যেকোনো সময়ে দেখে তিনি সরাসরি পরামর্শ দিতে পারেন। এ ছাড়া তিনি সেবার মান নিয়েও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার বছর দুই আগে এখানে দায়িত্ব পাওয়ার পর আরও বেশ কিছু জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়েছেন। দেশের ভেতরের কাজে পুলিশের ছাড়পত্রের জন্য পাঠানো সব আবেদনপত্র তিন দিনের মধ্যে এবং বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাত দিনের মধ্যে সম্পন্ন করারও নির্দেশ দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া আবেদনকারীদের কাছে খোঁজখবর নেন, পুলিশের ছাড়পত্র নিতে তাঁদের কোনো উৎকোচ দিতে হয়েছে কি না কিংবা কোনো পুলিশ কর্মকর্তা উৎকোচ চেয়েছেন কি না। অন্যদিকে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ‘প্রত্যয়ী’ নামে একটি সেল গঠন করা হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে পারিবারিক বিরোধ মেটানো হয়। এই সেল গত দুই বছরে ৭০টির মতো পারিবারিক বিরোধের মীমাংসা করেছে।

আইনের শাসন, তথা ন্যায়বিচারের প্রথম শর্তই হলো নির্বিঘ্নে প্রতিকার চাইতে পারা। আমাদের সমাজে দুর্বলেরাই সবলদের হাতে নিগ্রহ ও অবিচারের শিকার হন। তাই মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কেবল মুখে নিজেদের সেবক দাবি করলেই হবে না, কাজেও তা প্রমাণ করতে হবে। দেশের অন্যান্য থানায়ও এ রকম নজরদারির ব্যবস্থা করা হোক। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার যদি তাঁর অধীনের সাতটি থানা সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে পারেন, অন্যরা কেন নয়?