জীবিকার সংগ্রামের কারণে অনেক দরিদ্র পরিবার তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চায় না। অনেক শিশুও পড়ালেখা করতে আগ্রহ দেখায় না। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ে অনেক শিশু। করোনা মহামারির কারণে এটি আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝরে পড়া শিশুদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমন সময়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় একটি পাঠাগারের খবর আমরা পেলাম, যেখানে ১৫ বছর ধরে ঝরে পড়া শিশুদের পাঠদান চলে আসছে। স্থানীয় একটি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক একাই পাঠাগারটি পরিচালনা করছেন। নিরলসভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সমাজে এমন শিক্ষাবান্ধব মানুষ আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাজুরাও গ্রামে অবস্থিত ‘সবুজ শিশু পাঠাগার’। এখানে অসহায়-দরিদ্র পরিবারের শিশু ও শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। প্রায় দেড় দশক ধরে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদের পড়াচ্ছেন শিক্ষক আলমগীর কবির। প্রায় ১৫ হাজার মানুষের গ্রামটিতে শিক্ষার হার ছিল কম। ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যাও ছিল বেশি। তবে বর্তমানে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে সব শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে যাচ্ছে। গ্রামের সব ছেলেমেয়ে এখন স্কুলে যাচ্ছে। এর কৃতিত্ব পুরোটাই আলমগীর কবিরকে দিতে চান গ্রামবাসী।
আলমগীর কবিরের অনেক সহপাঠী অল্প বয়সে পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ে। সেখান থেকে তাঁর মাথায় চিন্তা আসে ঝরে পড়া রোধ এবং বাচ্চাদের জীবনমুখী শিক্ষা দিতে হবে। এরপর ২০০৪ সালে তিনি গ্রামের কয়েকজনের সহায়তায় সেখানকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর পাঠাগার কার্যক্রম শুরু করেন। সে সময় সেখানে পাঠ নেওয়া অনেকেই পড়াশোনা শেষ করে এখন চাকরি করছেন। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। এক দশক ধরে নিজ বাড়ির আঙিনায় ঘর নির্মাণ করে পাঠাগারটি চালাচ্ছেন শিক্ষক আলমগীর। তিনটি কক্ষে বর্তমানে ৩০-৩৫টি শিশু পড়ালেখা করছে। স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পর বাচ্চাদের পাঠদান করা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও বর্তমানে আবার পাঠদান শুরু হয়েছে।
শিক্ষা ছাড়া কোনো জনপদের অগ্রগতি ও উন্নতি সম্ভব নয়। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বছরের পর বছর ধরে গ্রামের শিক্ষার হার শতভাগ নিশ্চিত করার পেছনে ভূমিকা রাখছে সবুজ শিশু পাঠাগার। শিক্ষক আলমগীর যে বাতিঘর খাজুরা গ্রামে গড়ে তুলেছেন, তার আলো ছড়িয়ে পড়ুক অন্যান্য গ্রামেও।