শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাইজ্জারচরের দুটি বিদ্যালয় ও একটি বাজারে ১৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পদ্মার ভাঙনের হুমকিতে থাকার খবরটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জাজিরার কাইজ্জারচরে রয়েছে কাইজ্জারচর সমির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় এবং ওই বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রয়েছে কাইজ্জারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে উচ্চবিদ্যালয়ে ৪৫০ জন ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বিদ্যালয় দুটিতে তিনটি পাকা ও তিনটি টিনের ভবন রয়েছে। সমির উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের একতলা নতুন ভবনটির একদম পেছনে পদ্মা নদী আর নদীর দুই প্রান্ত দিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। যদিও বিদ্যালয়ের ১৪০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। কিন্তু নদীতে পানির স্রোত ও ঢেউ বাড়লে ভাঙন প্রবল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়ের ভবনগুলো বিলীন হয়ে যেতে পারে। বিদ্যালয়কে ঘিরে কাইজ্জারচর বাজার গড়ে উঠেছে। ওই বাজারে একটি সরকারি টোলঘর, একটি মসজিদ ও ১৫টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেসবও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
ভাঙন থেকে এসব স্থাপনাকে রক্ষা করতে হলে এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বিশেষ করে বিদ্যালয় দুটি রক্ষা না পেলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার যে ক্ষতি হবে, তা পরবর্তী সময়ে পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। এ জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় পাউবোকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। নদীভাঙন রোধে তাদের দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে তৎপর হতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, স্থানীয় প্রশাসন থেকে চাপ না এলে বা কোনো কাজের গুরুত্ব যথাযথভাবে তুলে ধরতে না পারলে এ ধরনের কাজে অর্থের বরাদ্দ বা প্রকল্প পাস করানো সহজ হয় না।
আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি হচ্ছে নদীভাঙন। এই নদীভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি সুদূরপ্রসারী। নদীভাঙনের কারণে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কমপক্ষে ১০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাড়িঘর পুড়ে গেলে ভিটেটুকু থাকে, ফলে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করা যায়। কিন্তু নদীভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাঁইও মেলে না।
আমাদের দেশে নদীর তলদেশ ক্ষয়ে যাওয়া, বন্যার তীব্রতা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত খনন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ, গ্রোয়েন নির্মাণসহ নানা কারণে নদীভাঙন হয়। সরকারি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন রোধে নেওয়া হয় নানা প্রকল্প। ব্লক ফেলাসহ নেওয়া হয় নানা ব্যবস্থা। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও এসব ব্যবস্থা স্থায়ী হয় না। আমরা চাই, পদ্মা নদীসহ দেশের অন্যান্য নদীতে সৃষ্ট ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।