‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ’-এ পরিষ্কার বলা আছে, ‘অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট করা যাইবে না।’
‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০’ বলছে, ‘প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না...উক্ত রূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাইবে না৷’ একটি পুকুরকে ভরাট করে যদি বসতভিটায় পরিবর্তন করেন, তবে তা শ্রেণি পরিবর্তন বলে গণ্য হবে। ‘কোনো ব্যক্তি এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করিলে তিনি অনধিক ৫ বত্সরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷’
কর্তৃপক্ষের কাছে এই আইন দুটোও যথেষ্ট মনে হয়নি, তাই ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশও জারি করা হয়, কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না, পরিবর্তন করা যাবে না গতিপথ।
কিন্তু এসব আইন ও আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ১২ দিন ধরে ধর্মসাগরের পশ্চিম পাড়ের বহু পুরোনো একটি পুকুর ভরাট করেছে কুমিল্লার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। তাদের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর জন্য এখানে একটি বাড়ি বানাবে তারা।
আর পুকুর ভরাটের পেছনে যে যুক্তিগুলো তারা দিয়েছে, শুনলে অবাক হয়ে যাবেন। তারা বলছে, ‘এটি পরিত্যক্ত পুকুর।’ যেন পরিত্যক্ত পুকুর আইনের আওতায় পড়ে না। যেন পরিত্যক্ত পুকুর ভরাট করাটা জায়েজ আছে। তারা বলছে, ‘যেকোনো সময়ে এটি বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ যেন দখল হয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে, এমন যেকোনো পুকুরই ভরাটযোগ্য, পুকুরটা ভরে তাই চমৎকার একটা কাজ তারা করছে। আর তৃতীয় যে যুক্তিটি তারা দিয়েছে, সেটির অর্থই আমরা বুঝতে পারিনি, ‘পরিকল্পিতভাবে আমরা সেটি ভরাট করছি।’ পরিকল্পিত ভরাট জিনিসটা আবার কী? এই কাঁঠালের আমসত্ত্বটি প্রয়োগ করে সারা দেশের পুকুর-নদী-জলাশয় আমরা ভরে ফেলছি না কেন?
মজার ব্যাপার হচ্ছে এ ভরাটের কাজটা যেখানে হচ্ছে, তার কাছেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নগর ভবন। নগরের এতগুলো কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় ১২ দিন ধরে কাজটা হচ্ছে, কেউ কিছু বলেনি।
আর সাধারণ মানুষই–বা সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এ কাণ্ড দেখে কী শিখবে? পরে তারা যদি পুকুর ভরাট করে, তখন সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানই–বা কী যুক্তি দিয়ে তাদের ঠেকাবে?