২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা জোর গলায় বলেছিলেন, অপরাধী যে–ই হোক না কেন, পার পাবে না। সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে যঁাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁরা সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর। বিভিন্ন মামলায় মোট ১৪ জনকে আটক করা হয়; যাঁদের মধ্যে তিনজন জামিনে আছেন, ১১ জন কারাগারে। বাকি দুজন খাতাপত্রে আটক থাকলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, মানি লন্ডারিং আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ৫৫টি মামলা করেন র্যাব, সিআইডি ও দুদকের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে র্যাব-সিআইডি মিলে অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা এবং মানি লন্ডারিং আইনে ৩২টি মামলা করে। মানি লন্ডারিং আইনে হওয়া ১৪ মামলার মধ্যে ১০টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। যুবলীগের নেতা সম্রাটের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাসহ চার মামলার অভিযোগপত্র আটকে আছে।
ঢাকার বাইরেও ক্যাসিনো–কাণ্ডের হোতাদের জাল বিস্তৃত ছিল। মামলার সূত্রে অনেক রাঘববোয়ালের নাম এসেছিল, যাঁরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছেন। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী ক্যাসিনো-কাণ্ডের দেড় বছর পার হলেও ৫৫টি মামলার মধ্যে ২০টির তদন্তকাজ এখনো শেষ হয়নি। অপর ৩৫টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হলেও বিচারপ্রক্রিয়ায় গতি নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে কারোনাকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু করোনার আগে তাঁরা বেশ কয়েক মাস সময় পেয়েছিলেন। সে সময়ে তদন্তকাজ ঠিকমতো চললে মামলাগুলো আটকে থাকত না।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, যেসব মামলার তদন্ত আটকে আছে, তার বেশির ভাগই মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের। মামলা দায়েরকারী প্রতিষ্ঠান একে অপরের ওপর দায় চাপিয়ে পাপস্খলনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব মামলা একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কযুক্ত। সে ক্ষেত্রে সব মামলার দ্রুত তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ক্যাসিনো মামলায় আটক ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ঠিকাদার জি কে শামীম গ্রেপ্তার হলেও অসুস্থতার দোহাই দিয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হৃদ্যন্ত্রের সমস্যার কারণে সম্রাট সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আর জি কে শামীম অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি হিসেবে হাসপাতালে আছেন।
বাংলাদেশে অদ্ভুত ঘটনা হলো, আটক গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিরাও অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পান না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদ অসুস্থ অবস্থায় সম্প্রতি কারাগারেই মারা গেছেন। আবার সম্রাট ও জিকে শামীমের মতো প্রভাবশালী আসামিরা নানা অজুহাতে বন্দিজীবনের বেশির ভাগ সময় হাসপাতালে কাটানোর সুযোগ পান।
গত বছর জুন মাসেও আমরা সম্পাদকীয় লিখে ক্যাসিনো মামলার তদন্তকাজে ধীরগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম। সে সময় তদন্তের অপেক্ষায় ছিল ২৯টি মামলা। এখন ২০টি। ১১ মাসে মাত্র ৯টি মামলার তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। তদন্ত হলো বিচারের প্রাথমিক পর্ব। তদন্তই যদি শেষ না হয়, কীভাবে বিচার হবে?
অবিলম্বে ক্যাসিনো–কাণ্ডের সব মামলা-অভিযোগপত্র পেশ করা হোক। সরকার যে সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে ইচ্ছুক, তা কাজেই প্রমাণ করতে হবে।