গত শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা খোলা ছিল চাকরিপ্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার জন্য। করোনা সংক্রমণের কারণে দেড় বছরে এ রকম চিত্র আর দেখা যায়নি। পরীক্ষা দেওয়া মানে চাকরি হয়ে যাওয়া নয়। একটি পদের বিপরীতে ৩০ থেকে ৪০ জন কিংবা আরও বেশি পরীক্ষার্থী থাকেন। তারপরও আশার কথা যে সরকারি ও বেসরকারি খাতে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে চাকরির বাজার অত্যন্ত সংকুচিত। প্রতিবছর ২২ লাখ তরুণ চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন, যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে ছয়–সাত লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। অবশিষ্ট বিপুলসংখ্যক তরুণের মধ্যে একাংশ বিদেশে পাড়ি জমান ভাগ্যান্বেষণের উদ্দেশ্যে। ক্ষমতার শীর্ষ থেকে চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে উদ্যোক্তা হওয়ার সদুপদেশও আমরা শুনে থাকি। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত বাধা আছে, সেগুলো দূর করার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না।
করোনার কারণে সরকারি–বেসরকারি উভয় খাতে নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। বেসরকারি খাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা যায়। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন নিয়োগ তো দেয়ইনি, পুরোনোদের ছাঁটাই করেছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে আশা করা যায় বেসরকারি খাতে নিয়োগপ্রক্রিয়াও জোরদার হবে। সরকারি চাকরির আকর্ষণীয় প্রক্রিয়া হলো বিসিএস পরীক্ষা, করোনার কারণে তা–ও থমকে ছিল। এর আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) বছরে একটি বিসিএস পরীক্ষা সম্পন্ন করার চেষ্টা করত। করোনার কারণে এখন তিনটি পরীক্ষা আটকে আছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী ২৯ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। ৪০ ও ৪১তম বিসিএসের পরীক্ষার তারিখও দ্রুত নির্ধারণ করা জরুরি। এতে পরীক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তা কাটবে।
সরকার চাকরিপ্রার্থীদের বয়সের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিয়েছে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ যাঁদের বয়স ৩০ বছর হয়েছিল, তাঁরা চলতি বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরির দরখাস্ত দিতে পারবেন, তরুণদের দাবি ছিল সবার জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স দুই বছর বাড়ানো। গত জুন মাসে ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস, ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে সরকারি চাকরিতে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫টি পদ শূন্য আছে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি পদ শূন্য—দুই লাখ। সরকারি চাকরিতে মোট অনুমোদিত ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৬৮ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৫ লাখ ৪ হাজার ৯১৩ জন।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের জরিপের মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণদের ৬৬ শতাংশ বেকার। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা তরুণদের চাকরি পাওয়ার হার কিছুটা বেশি হলেও স্বস্তিদায়ক নয়। ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষিত বেকারদের হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি।
এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুগের চাহিদা মেটাতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে উপরিকাঠামোয় টুকটাক পরিবর্তন কোনো কাজে আসবে না, শিক্ষার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন, যার কিছু ইঙ্গিত আছে নতুন শিক্ষাক্রমে। দ্বিতীয়ত, প্রবৃদ্ধিমুখী উন্নয়ন বাদ দিয়ে কর্মসংস্থানমুখী উন্নয়ন কৌশল নিতে হবে।
সরকার যদি সত্যি সত্যি বেকার সমস্যা কিছুটা লাঘব করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে শূন্য পদগুলো অবিলম্বে পূরণ করা।