আসামির নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কার?

সম্পাদকীয়

গত সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত প্রাঙ্গণে সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীকে মারধরের চেষ্টা এবং তাঁকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। কারও বিরুদ্ধে মামলা হলেই প্রমাণিত হয় না যে তিনি অপরাধী। অভিযুক্ত অপরাধী কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব আদালতের, কোনো আইনজীবী বা রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীর নয়।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সোমবার বেলা দুইটার পর কড়া পুলিশি পাহারায় সাবের হোসেন চৌধুরীকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত চত্বরে সাবের হোসেন চৌধুরীর শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকে একদল লোক। বেলা তিনটার পর যখন সাবের হোসেন চৌধুরীকে পুলিশি পাহারায় হাজতখানা থেকে এজলাসকক্ষে নেওয়া হচ্ছিল, তখন বহিরাগত কয়েকজন তাঁকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করে। সাবের হোসেন চৌধুরীর মাথায় পুলিশের হেলমেট আর শরীরে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট থাকায় তাঁর শরীরে আঘাত লাগেনি।

এর আগে আগস্ট মাসে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে হেনস্তা করা হয়। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ আরও কয়েকজন।

ঢাকা-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীকে রোববার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে পল্টন থানায় করা বিএনপির কর্মী মকবুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাবের হোসেন চৌধুরীকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তাকারী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী। অন্যদিকে সাবের হোসেন চৌধুরীকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর হেফাজতে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ তাঁকে আদালতে হাজির করে জানায়, তিনি অসুস্থ। শুনানি শেষে আদালত পৃথক ছয়টি মামলায় সাবের হোসেন চৌধুরীকে জামিন দেন।

আদালত প্রাঙ্গণে একজন আসামির নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কি তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন? করেননি বলেই বারবার আদালত প্রাঙ্গণে জনহেনস্তার ঘটনা ঘটছে।

এর আগে, ৬ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সেই সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আসামিপক্ষের আইনজীবীকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বারবার বাধা দেন। তখন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান আইনজীবীর পোশাক পরে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলেন।

সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগের একজন পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা বা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এ রকম প্রমাণ নেই। তারপরও আগের বিএনপি সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে ফেরিতে প্লেট চুরির মামলা দেওয়া হয়েছিল।

অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, আদালত অঙ্গনে কোনো আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীর আচরণ এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, কঠোর হাতে এগুলো দমন করতে হবে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তার বিচার হবে, কিন্তু বিচারের নামে কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেওয়া যাবে না।