বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের কমবেশি প্রতি চারজনের একজন খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। এটা সত্যি যে ভূখণ্ডের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় সব নাগরিকের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান দেওয়া নিশ্চিত করাই বিশাল একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু তাই বলে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি কোনোভাবে উপেক্ষা করা যাবে না।
দুঃখজনক হলেও আমাদের নীতিনির্ধারক, কৃষক ও বিক্রেতা পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে ন্যূনতম কোনো সচেতনতা এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা নেই। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণনের নানা স্তরে খাবারকে রাসায়নিক ও বিষাক্ত উপাদান থেকে নিরাপদ রাখার কোনো ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি। এ কারণে জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব পড়ছে মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতে বরই, পেয়ারা, লালশাক, ফুলকপি, বেগুনসহ নানা ধরনের সবজির চাষ হয়। এর মধ্যে ৩০০ হেক্টর জমিতে নালার পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ হয়। গভীর নলকূপ দিয়ে সেচের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকেরা এই পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব জমির আশপাশে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের প্ল্যান্ট রয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন কলকারখানাও রয়েছে। নালা-নর্দমার পানিতে সেসব বর্জ্য গিয়ে মিশছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদক স্থানীয় ২০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, সেচের পানির সংকটে তাঁরা দিশাহারা। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের অন্য সময়ে তাঁরা বাধ্য হয়ে নালা-নর্দমার পানি ব্যবহার করেন। এই পানি ব্যবহারে কী ক্ষতি হয়, সেটা তাঁরা জানেন না।
চট্টগ্রামের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ময়লা-আবর্জনা ও আর্সেনিকমিশ্রিত পানি সেচের কাজে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। তাঁরা এর জন্য কৃষকের পাশাপাশি সরকারি দপ্তরের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। সেচ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ভাষ্য হলো, পতেঙ্গায় যে নালার পানি দিয়ে চাষাবাদ হচ্ছে, সেটা তারা জানে না।
অথচ পতেঙ্গায় প্রায় ১ হাজার ২০০ কৃষক আছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবারের রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭ হাজার ২০০ টন। প্রশ্ন হচ্ছে, উৎপাদনের একটা লক্ষ্যমাত্রা দিয়েই কি কৃষি বিভাগ তার দায়িত্ব শেষ করবে? নিরাপদ খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে কি না, সেটা দেখভাল করবে কারা?
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নামে একটি সরকারি সংস্থা আছে, এ ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। শুধু খাদ্যের জোগানই নয়, নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা নাগরিকের অধিকারের মধ্যে পড়ে। নীতিনির্ধারকদের এখানে মনোযোগী হতে হবে। নিরাপদ খাদ্য শুধু কিতাবের বিষয় হতে পারে না।