এভাবে একটি হাসপাতাল চলে কীভাবে

সম্পাদকীয়

বিগত সরকারের আমলে দেশে একের পর এক স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। অনেক ভবন ও বাক্সবন্দী যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রপাতি অচল থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, এমন ঘটনা নতুন নয়, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তেমন দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমআরআইসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রায় অর্ধেক যন্ত্রপাতিই অচল। সরকারি প্রতিবেদনেই দেখা যাচ্ছে, ৫৫৫টি যন্ত্রের মধ্যে ২৫৭টি অচল। অচল যন্ত্রের মধ্যে এমআরআই ও সিটি স্ক্যানের মতো বড় যন্ত্র যেমন আছে, তেমনি আছে পালস অক্সিমিটারের মতো ছোট যন্ত্রও। হাসপাতালের সীমাবদ্ধতার এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিছু চিকিৎসকই আছেন, যাঁরা রোগীদের পরামর্শ দেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার। সেখানে গিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে গিয়ে চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন রোগী ও তাঁর স্বজনেরা।

শুধু যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকাই নয়; চিকিৎসক ও ওষুধসংকট, দালালদের দৌরাত্ম্য, আউটসোর্সিং নিয়োগ ও দায়িত্ব পালনকারীদের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে পুরো হাসপাতালটিই যেন রোগী হয়ে গেছে। হাসপাতালটিতে প্রায় অর্ধেক চিকিৎসক পদ শূন্য। হাসপাতাল রক্ষণাবেক্ষণ কাজে আউটসোর্সিংয়ের বিপুল লোক নিয়োগ দেওয়া হয়, যাঁদের অনেকে মাসে এক দিনও আসেন না, মাস শেষে শুধু বেতন তোলেন। হাসপাতালের টয়লেট থেকে শুরু করে করিডরের আশপাশ নোংরা থাকে। দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত কুকুর চলে আসে। এ ছাড়া কোনো টাকা না দিলে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা রোগীর কোনো ছোটখাটো কাজই করতে চান না। তাঁদের অনেকেই আবার বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল হিসেবে কাজ করে থাকেন। আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের অনেকের স্বজন হাসপাতালে বড় পদে চাকরি করেন, ফলে তাঁরা এখানে সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছেন।

হাসপাতালের ওষুধ-স্যালাইন এমনকি ফ্যান চুরির ঘটনা আছে। গত মে মাসে হাসপাতালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২২ জন দালালকে আটক করে জেলহাজতে দিয়েছিল। আমরা মনে করি, নিয়মিতভাবে এ অভিযান চালানো উচিত। সার্বিক বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সারা দেশে প্রান্তিক হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক-সংকট আছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয় জানে। অচল যন্ত্রপাতির তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আর আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কয়েক দশকের পুরোনো একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমন করুণ দশা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত। রোগীর যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের সুষ্ঠু পরিবেশ ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের আরও কঠোর হতে হবে। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণেও তাদের আন্তরিক হওয়া দরকার। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের প্রতি আমাদের অনুরোধ, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নজর দিন।