হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক

সম্পাদকীয়

কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে, ওরসে হামলা ও ভাঙচুর চলছে, কোথাও কোথাও কনসার্ট ও গানের আসরেও বাধা এসেছে। সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই প্রকাশ পাচ্ছে, ‘তৌহিদি জনতা’ নামে সমাজের একটি অংশ এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় জয়পুরহাটে ভাঙচুর চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে নারীদের একটি ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বুধবার নারীদের একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। এই খেলা বন্ধ করতে আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকার ‘বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা’ সেখানে জড়ো হন। উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে ম্যাচের জন্য মাঠ ঘিরে দেওয়া টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন। যদিও স্থানীয়দের দাবি, টিনের বেড়া দিয়ে টিকিট কেটে খেলার আয়োজন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। যে কারণে স্থানীয় প্রশাসন বেড়া খুলতে গেলে খেলার আয়োজকদের রোষানলেও পড়েন। এমন বিরোধ থেকে পরবর্তী সময়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি সমাবেশে স্পষ্ট ভাষায় মেয়েদের খেলাধুলার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের খেলাধুলা, বিশেষ করে ফুটবল খেলা নিয়ে ধর্মীয় বা সামাজিক বাধা ও আপত্তি নতুন নয়। সেসব উপেক্ষা করে বা সেই প্রতিবন্ধকতা জয় করেই তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা নারীরা জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় টুর্নামেন্ট জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বলও করেন। এরপরও ফুটবলে নারীদের সাফল্য সমাজের একটি অংশ মেনে নিতে চায় না। তারা শুধু নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণই নয়, ঘরের বাইরে গিয়ে শিক্ষা বা কোনো কর্মসংস্থানেও আপত্তি তুলতে চায়। তারা বুঝতে চায় না দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর অগ্রগতি ছাড়া একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

যাহোক, ফুটবল ম্যাচে এভাবে বাধা দেওয়া ও ভাঙচুর চালানো অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ। জয়পুরহাটের ঘটনায় ফুটবল ম্যাচের আয়োজক এবং প্রশাসন কেউই কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে ইচ্ছুক নন বলে আমরা জানতে পারছি। তারা স্থানীয়ভাবেই বিষয়টির সুরাহা করতে চায়। কিন্তু বিষয় হচ্ছে আইনি ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা পরবর্তী সময়ে আরও ঘটবে না কিংবা এ ঘটনার প্রভাব দেশের অন্যত্র পড়বে না, তার নিশ্চয়তা কী? মাজার–ওরসে হামলা, ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা জোরালো নয়।

আমরা আশা করব, সরকার এসব ঘটনায় দ্রুত তৎপর হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জনমনে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতেও সচেষ্ট হবে।