খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে ঢাকার সাভার উপজেলার দক্ষিণ কবিরপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। প্রথম আলোর খবর বলছে, এই মাঠ অসমতল সরকারি খাসজমি ছিল। পরে এলাকাবাসী মাটি ফেলে খেলার উপযোগী মাঠ তৈরি করেন সেই ১৯৬০ সালে।
এর তদারক করে কবিরপুর উদয়ন সংঘ। ভূমি রেকর্ড, জরিপ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা মাঠে এসে জানিয়ে গেছেন এখানে তাঁরা বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করবেন। এই খবরে শিশু-কিশোরেরা তো বটেই, পুরো এলাকাবাসী বিপর্যস্ত।
তঁারা তাই মাঠে নেমেছেন। তঁারা স্লোগান দিচ্ছেন—রক্ত দেব, মাঠ দেব না। স্থানীয় স্কুলে খেলার মাঠ নেই। শুধু শিশুরা নয়, এই মাঠ এ এলাকার প্রায় অর্ধলাখ মানুষের সম্বল। শিশু-কিশোরেরা খেলে, কেউ মারা গেলে জানাজাও হয় এই মাঠেই।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ভবন বানানোর জন্য কেন এই মাঠ বেছে নিচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। কারণ, মাঠ হিসেবে চিহ্নিত স্থানে ভবন বানানোয় আইনি বাধা আছে। আরএস ভূমি জরিপ ম্যাপে এই এলাকা চতুর্ভুজাকৃতির মাঠ হিসেবে চিহ্নিত।
আমরা জানি, যেকোনো সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। সেই যাচাইপ্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবিধা-অসুবিধার দিক। সরকারি যেকোনো সংস্থার মতো ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কাজও জনগণের সেবা করা। সেই জনগণই যদি না চায়, যাদের বড় অংশ আবার শিশু; তাহলে কাদের সেবায় এই ভবন নির্মিত হচ্ছে?
সাভারের মতো ঢাকাতেও একের পর এক মাঠ দখল হয়েছে। সে-ও ওই উন্নয়নের নামেই। গত বছরই প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো মাঠ নেই। প্রতিবেদনের শুরুতে ঢাকার ধূপখোলা মাঠের উদাহরণ ছিল। প্রতিবেদকেরা আমাদের জানিয়েছিলেন, মাঠের এক পাশে পাঁচতলা বিপণিবিতান বানানো হচ্ছিল। কলাবাগানের একচিলতে তেঁতুলতলা মাঠ তো একসময় জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল।
শিশুদের আবেগকে একচুলও তোয়াক্কা না করে পুলিশ সেখানে থানা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। আর দিন দুয়েক আগে খবর বেরোল চট্টগ্রামে একটি শিশুপার্কের ফটকে ‘ভিআইপি’দের নিরাপত্তার অজুহাতে তালা ঝোলানো হয়েছে। দেখেশুনে মনে হয় কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারি সংস্থাগুলোর চক্ষুশূল এখন শিশুরা।
অথচ ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার’ ‘২০১৩-২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অভিভাবকদের বলা হয়েছিল, বেশির ভাগ শিশু প্রায় সময় ফ্ল্যাটে মুঠোফোন, ল্যাপটপ ও আইপ্যাড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে।
শিশুদের কিছু সময়ের জন্য হলেও বাইরে গিয়ে মাঠে খেলাধুলা করা এবং দৌড়ঝাঁপ দেওয়ার সুযোগ অভিভাবকদের দেওয়া উচিত। এতে করে শিশুদের সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে।
শীর্ষ পর্যায়ের কথা যে অনেক সময় কথার কথা হয়ে মাঠপর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, তার চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত খেলার মাঠ দখল।