সুরক্ষায় প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নিন

নদ–নদী, খাল–বিল, হাওর–বাঁওড় মিলে বাংলাদেশ। তবে নদ–নদী–খালের বিপন্ন পরিস্থিতির কথা যেভাবে আলোচনায় উঠে আসে, অন্য জলাশয়গুলো নিয়ে আমরা সেই অর্থে মনোযোগী নই। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশাল বিলগুলো খাদ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত। ধানসহ অন্যান্য ফসল ও মাছের স্বর্গ বলা যায় এসব বিলকে। এমন একটি বিল হচ্ছে দিনাজপুরের কড়াই বিল। এ বিল দিন দিন শ্রী হারাচ্ছে। বিলের পাড়ের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। মানুষও আগের মতো ঘুরতে আসে না। সব মিলিয়ে বিষয়টি হতাশাজনক।  

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, দিনাজপুর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলার কড়াই বিলের অবস্থান। ধান ও মাছ চাষ ছাড়াও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত বিলটি। একসময় অতিথি পাখিদের কলকালিতে মুখর থাকত ৫৬ একর আয়তনের বিল এলাকা। স্বাধীনতা–পরবর্তী সময়ে বিলের মাঝবরাবর প্রায় ২৮ একর (পাড়সহ) আয়তনের পুকুর খনন করা হয়। পাড়ে লাগানো হয় কয়েক হাজার ফলদ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের গাছ। বিল ও পুকুরের সৌন্দর্য উপভোগ এবং অতিথি পাখিদের দেখতে ভিড় করতেন দর্শনার্থীরা। এখন বিলে পানি নেই, কাটা হয়েছে পাড়ের গাছগুলো। দর্শনার্থীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

গত সোমবার পুকুরপাড়ের ছয় শতাধিক ফলদ ও বনজ গাছ কাটা পড়েছে। বিরল থানা মুক্তিযোদ্ধা হাঁস-মুরগি ও পশু পালন খামার সমবায় সমিতির নেতারা নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব গাছ কেটেছেন বল অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে কেটে ফেলা গাছগুলো জব্দ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে সমিতির নেতাদের দাবি, সবার সিদ্ধান্ত নিয়ে গাছগুলো কাটা হয়েছে, এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, গাছ কাটতে হলে বন বিভাগকে অবহিত করার বিধি আছে। কিন্তু কড়াইবিলের গাছগুলো কাটার বিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি।

পুকুরটির দেখভালের সমিতির অধীনেই। একসময় সমিতিটির নিয়ন্ত্রণে ছিল আগের ক্ষমতাসীন দলের ব্যক্তিরা। এখন সেখানে প্রভাব বিস্তার করছেন অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা। তঁাদের মাধ্যমেই এতগুলো গাছ কাটা পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে শতাধিক ছিল আমগাছ। গাছগুলোতে মুকুলও এসেছে। গরমকালে গাছগুলোর ছায়ার নিচে বসে প্রশান্ত হতেন স্থানীয় লোকজন। এখন প্রায় গাছশূন্য হওয়ায় পুকুরটি ঘিরে প্রশান্তিময় পরিবেশ নষ্ট হলো। অসংখ্য পাখির আবাসও ধ্বংস হলো।

 বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এই গাছগুলো খাস খতিয়ানের জমিতে। ভূমিসংক্রান্ত একটি মামলা চলমান আছে। গাছ কাটার ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে কোনো আবেদন করা হয়নি। বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার কারণে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আমরা আশা করব, প্রশাসন কড়াইবিলকে ঘিরে সমিতির কার্যক্রম নিয়মিত মনিটর করবে। বিলটির সুরক্ষায় প্রশাসনকে মনোযোগী হবে। আগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।