আর কত দিন বিকল থাকবে যন্ত্রগুলো

সম্পাদকীয়

দেশের ক্যানসার চিকিৎসার প্রধান কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালে কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী—সবাই আছেন, কিন্তু ক্যানসারের চিকিৎসা করার জন্য অত্যাবশ্যক যন্ত্রগুলোই বিকল অবস্থায় পড়ে আছে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ৫০০ শয্যার জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগীরা রেডিওথেরাপি বা বিকিরণ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এই চিকিৎসার সব কটি যন্ত্র নষ্ট। কবে নাগাদ যন্ত্র ঠিক হবে কিংবা নতুন যন্ত্র আসবে, কর্তৃপক্ষ তা-ও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। বিস্ময়ের বিষয় হলো ক্যানসার হাসপাতালের এক্স-রে যন্ত্রটিও বিকল হয়ে আছে দুই সপ্তাহ ধরে।

ক্যানসারের তিন ধরনের চিকিৎসা হয় যথাক্রমে কেমোথেরাপি বা ওষুধের মাধ্যমে, রেডিওথেরাপি বা বিকিরণ চিকিৎসা, অর্থাৎ ক্যানসার কোষ বিশেষ আলোকরশ্মির মাধ্যমে মেরে ফেলা এবং অস্ত্রোপচার। ক্যানসার এমন এক মারাত্মক ব্যাধি, রেডিওথেরাপি মাঝপথে বন্ধ করে দিলে শরীরে ফের তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

এই হাসপাতাল সর্বাধিক সংখ্যক ক্যানসার রোগীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে এবং সেখানে রোগীদেরও প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা যায়। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন। এর প্রধান কারণ, এখানে স্বল্প ব্যয়ে রেডিওথেরাপি করানো যায়। একবার রেডিওথেরাপির খরচ মাত্র ২০০ টাকা। বেসরকারি কোনো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে লাগে চার থেকে আট হাজার টাকা।

১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগটি খাঁ খাঁ করছে, কোনো রোগী নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী ১৭০টি কেন্দ্র থাকা দরকার। সরকারি বেসরকারি মিলে আছে ৩৩টি। দেশের সবচেয়ে বড় ক্যানসার হাসপাতালটির যখন এ অবস্থা, তখন অন্যগুলো কীভাবে চলছে, অনুমান করা কঠিন নয়। দেশে ক্যানসার ও কিডনির মতো জটিল রোগের চিকিৎসা–সুবিধা কম থাকায় রোগীরা দলে দলে বিদেশে যাচ্ছেন। মাসখানেক আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে কিডনি রোগীরা বিক্ষোভ করছিলেন স্বল্প দামে ডায়ালাইসিস দেওয়ার দাবিতে। আন্দোলনের মুখে সেই দাবি কর্তৃপক্ষ মেনেও নিয়েছে। ক্যানসার হাসপাতালের বিকল যন্ত্র সচল করতেও রোগীদের আন্দোলন করতে হবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।

গত ডিসেম্বরে অবসরে যাওয়া ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ হাবিবুল্লাহ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যানসার হাসপাতালের সব যন্ত্র একসঙ্গে নষ্ট থাকবে, একজন রোগী সেবা পাবে না—এটা ভাবা যায় না। এমনিতেই রোগীদের সিরিয়াল পেতে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। এখন তা দেড় থেকে দুই বছরে দাঁড়াবে।’ যাঁরা সামর্থ্যবান, তাঁরা বিদেশে কিংবা দেশের ভেতরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীদের কোনো বিকল্প নেই সরকারি হাসপাতালে আসা ছাড়া।

চিকিৎসার যন্ত্র বিকলের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দোহাই দেবে আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়কে দায়ী করবে; এ দায় এড়ানোর ও দায় চাপানোর অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

অনেক সময় এমন অভিযোগও পাওয়া যায় যে বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য সরকারি হাসপাতালের অত্যাবশ্যক যন্ত্র অচল করে রাখা হয়। কী কারণে কিংবা কাদের ‘পাপে’ ক্যানসার হাসপাতালের যন্ত্রগুলো বিকল আছে, তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে অচল যন্ত্রগুলো সচল করা কিংবা নতুন যন্ত্র সরবরাহ করে রোগীদের চিকিৎসার পথ সুগম করা হোক।