বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা। এতে স্থানীয় জনগণ চরম দুর্ভোগে পড়ে। বন্যাপরবর্তী সহায়তা আসতে আসতে হয়ে যায় দেরি। এমনকি বন্যা শেষে কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার হয় না। প্রকল্প হলেও বরাদ্দ নেই, বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারের দেখা নেই। এসব তো আর নতুন নয় এ দেশে। এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত মানুষ অপেক্ষায় না থেকে নিজেই নেমে পড়ে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নে। সেখানকার তরুণ-যুবকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে একটি সড়ক সংস্কার করে ফেলেছেন। এতে দূর হয়েছে বিপুল জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগ। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রথম আলোর সংবাদ জানাচ্ছে, হালদা–তীরবর্তী মোকামিপাড়া গ্রামের সড়কটি গত এক সপ্তাহের বন্যায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ইট বিছানো সড়কটির পাঁচ থেকে সাত জায়গা ভেঙে জমির সঙ্গে মিশে গেছে। গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটেও চলাচল করা যাচ্ছিল না। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়েন সেখানকার বাসিন্দারা। রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন গ্রামবাসী। রিকশাচালকেরা ১০ দিন পর্যন্ত রিকশা বের করতে পারেননি। সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষেরা মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে এলাকার তরুণ-যুবকেরাই এগিয়ে এলেন। সরকার থেকে কখন সেই সড়ক সংস্কার হবে, সে আশায় বসে থাকার সুযোগ ছিল না তাঁদের।
একটি গ্রাম বা সমাজ সুন্দর করে তুলতে যে সদিচ্ছা, সম্মিলিত প্রচেষ্টা, উদ্যম ও কর্মতৎপরতা দরকার, সেটিই যেন দেখা যায় মোকামিপাড়ায়। তরুণ-যুবকেরা এ কাজে এগিয়ে এলেও তাঁদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন এলাকার প্রবীণ সদস্যরা। এভাবেই অগ্রজদের মতামত ও পরামর্শকে গুরুত্ব ও মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে একটি সমাজ বা এলাকায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়। বিষয়গুলোর গুরুত্ব দিন দিন ম্রিয়মাণ হয়ে গেলেও মোকামিপাড়ার বাসিন্দারা তা আমাদের সামনে নতুন করে হাজির করলেন।
সড়ক সংস্কারে এগিয়ে আসা তরুণ-যুবকদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, কেউ আবার চাকরি করেন। যুবকদের মধ্যে আছেন উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। নিজেরাই মাটি কেটে, ইট ভেঙে সড়ক সংস্কারের পুরো কাজ করেছেন। আমরা এসব তরুণ-যুবককে অভিবাদন জানাই। এলাকার উন্নয়নে তাঁরা সব সময় এভাবে তৎপর ও ঐক্যবদ্ধ থাকুন, সেটি আমরা কামনা করি।
নোয়াপাড়া ছাড়াও বন্যায় রাউজানের অনেক সড়ক বেহাল। সড়ক ও সেতুর ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ও কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সেগুলোর জন্য বরাদ্দ চাওয়া হবে। আমরা তাদের এ বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে চাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন উপজেলাটির ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুর সংস্কার করা হয়।