২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

প্রশাসনের এমন নির্বিকার ভূমিকা লজ্জাজনক

সম্পাদকীয়

বান্দরবানের লামা উপজেলায় সরই ইউনিয়নের ম্রো জনগোষ্ঠীকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কোনো ধরনের অপচেষ্টাই বাকি রাখছে না একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। এক বছর ধরে নানাভাবে সেখানকার ম্রো পরিবারগুলোকে রীতিমতো কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। গত রোববার রাতে রেংয়েন ম্রোপাড়ায় হামলা চালিয়ে লুটপাট, সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

ম্রো জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও হামলার জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এবারও পাড়াবাসীর অভিযোগ, কোম্পানিটি তাদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে।

পাড়ার ১১টি দরিদ্র পরিবারের চাল, কাপড়চোপড়, ছাগল, মুরগি, কোদাল, দা সবকিছুই লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। পরিবারগুলো আতঙ্কে ও কাপড়চোপড় না থাকায় প্রচণ্ড শীতে আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটিয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ এলাকাটি পরিদর্শন করলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ, থানায় ভুক্তভোগীদের কেউ এখনো মামলা বা অভিযোগ করেনি। আমরা সবচেয়ে অবাক হই, কয়েকটি পরিবার এভাবে হামলার শিকার হলো, দুই দিন পর্যন্ত তাদের পাশে দাঁড়াল না জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের কেউই।

প্রথম আলোর বান্দরবানের প্রতিনিধির কাছে জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজির বক্তব্য ছিল এমন, ‘যারা ভুক্তভোগী হয়েছে বলে দাবি করছে, তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে আমরা বিষয়টি দেখছি।’ লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে শীতের রাতে মানবেতর জীবনযাপন করছে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর কিছু মানুষ, সাহায্য-সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে কীভাবে তিনি ‘বিষয়টি দেখছেন’, তা আমাদের বুঝে আসে না। লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল বুধবার এলাকাটি পরিদর্শন করলেও তাঁর ভূমিকা হতাশাজনক।

এর আগে, গত বছর সেখানে ম্রো ও ত্রিপুরাপাড়ায় ৩৫০ একর জুমের জমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বর মাসে সেখানকার পানির একমাত্র উৎস ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে দেওয়া হয়। বান্দরবান জেলা পরিষদের পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে, পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেওয়া জমি প্রায় ২৫ বছর ধরে জোরপূর্বক ধরে রেখেছে কোম্পানিটি।

সব ধরনের শর্ত ভঙ্গ করে বেআইনিভাবে লিজের জমির বাইরে গিয়ে দখলদারি চালাতে ম্রো পাড়াবাসীকে উচ্ছেদ করার সব ধরনের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রীতিমতো নীরবতা পালন করে যাচ্ছে।

আক্রান্ত নাগরিকের পাশে না দাঁড়ানোর ব্রতই কি তারা নিয়েছে তাহলে? আমরা ম্রো জাতিগোষ্ঠীর ওপর এ ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছি।