পিটিয়ে কুমির হত্যা

সম্পাদকীয়

একসময় বাংলাদেশের নদ–নদী ও খালে কুমিরের দেখা মিললেও দখল-দূষণ, খাদ্যসংকটসহ নানা কারণে মিঠাপানির কুমির বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০০০ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন মিঠাপানির কুমিরকে বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। সুন্দরবনের লবণাক্ত এলাকাতেই এখন কুমিরের বিস্তার রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মাদারীপুরের নদ–নদীতে কালেভদ্রে কুমির চলে আসার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। কুমির নিয়ে জনমনে নানা জনশ্রুতি চালু থাকায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাই বলে ফাঁদ পেতে কুমির ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু সে রকমই একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটতে দেখলাম মাদারীপুরের কালকিনিতে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের নতুন আন্ডারচর গ্রামের একটি খালে গত শনিবার দুপুরে জেলেদের সহযোগিতায় ফাঁদ পেতে কুমিরটিকে আটকে ফেলা হয়। পরে উৎসুক জনতা কুমিরটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। কুমিরটি প্রায় আট ফুট দৈর্ঘ্য ও দুই ফুট প্রস্থ।

বিষয়টি এমন নয় যে কুমিরটি হঠাৎ করেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল। কিছুদিন ধরেই সেখানকার পালরদী নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদে কুমিরটিকে দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনও মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে। এরপরও কুমিরটিকে জীবিত উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় পুনর্বাসন করতে না পারাটা খুবই দুঃখজনক। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগ দায় এড়াতে পারে না। তারা কুমিরটিকে উদ্ধার করতে লোক পাঠায় ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে কুমিরটি মারা গেছে।

বন্য প্রাণী হত্যা আইনত অপরাধ। আমরা মনে করি, কুমিরটি হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের কুমির বিচ্ছিন্নভাবে সুন্দরবন থেকে আসার সম্ভাবনা বেশি। ফলে কুমির নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নদ–নদীতে কুমির দেখা গেলে স্থানীয় লোকেরা যাতে আতঙ্কিত না হন, এর জন্য সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

ভবিষ্যতে যাতে কুমিরসহ বন্য প্রাণী হত্যা বন্ধ করা যায়, এ জন্য প্রশাসন, বন বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। মাদারীপুর উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ যদি কুমিরটি উদ্ধারে আন্তরিক হতো, তাহলে এই হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যেত। শুধু মানুষ নয়, বন্য প্রাণীর প্রতিও সহানুভূতি প্রয়োজন।