রহিমা খাতুন (৫৫) চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডে পরিবারকল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ)। সবার প্রিয় ‘ডাক্তার আপা’ তিনি। কখনো হেঁটে, কখনো ভ্যানে চড়ে ঠিকঠাক হাজির হন গ্রামের মানুষের কাছে।
পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজননসেবা দেন তাঁদের। বাল্যবিবাহ নিয়ে সচেতনতার কাজও করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে বিরতিহীনভাবে চলছে তাঁর পথচলা। তাঁর এই কাজের সুফল পেয়েছেন এলাকার মানুষ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, রহিমা যখন কাজ শুরু করেন, ওই এলাকায় ৪৫০ প্রজননক্ষম দম্পতির মধ্যে ১৫-১৬ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আওতায় ছিলেন। এখন ওই এলাকায় দম্পতির সংখ্যা ১ হাজার ২৬০। তাঁদের ৯০ ভাগই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। পরিবারপ্রতি একটি-দুটির বেশি সন্তান নেই।
বাংলাদেশে এখন রহিমা খাতুনের মতো আরও অনেক ডাক্তার আপার প্রয়োজন। চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া যেমন আলো দেখিয়েছে, তেমনি দেশের বহু এলাকা অন্ধকারে আছে। ২০১২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্যবিষয়ক গ্লোবাল সামিটে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে মোট প্রজননহার ২-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ স্বাস্থ্য ও জনমিতি জরিপ ২০২২–এ দেখা যাচ্ছে, সিলেটে মোট জন্মহার ৩.১ থেকে ২.৩–এ নেমেছে। কিন্তু জন্মহার রংপুরে ২.১ থেকে ২.৫–এ পৌঁছেছে, খুলনায় এই হার ১.৯ থেকে এখন ২.২–এ দাঁড়িয়ে। আগে যেখানে ৬৫ শতাংশ নারী অপেক্ষাকৃত কম সন্তান চাইতেন, সেই সংখ্যাও কমে ৫৭ শতাংশে এসেছে।
দেখা যাচ্ছে পরিবারকল্যাণ সহায়িকারা যেখানে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, সেখানে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি ভালোভাবে চলছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিসেস ডিভিশনের কর্মকর্তারাই বলছেন, বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুরো কর্মসূচিতে। কেন রহিমা খাতুনের মতো কর্মীর সংকট? জানতে চাইলে অধিদপ্তর বলছে, পরিবারকল্যাণ সহকারীদের এখন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে বসতে হয়। তা ছাড়া টিকাদান কর্মসূচিতেও তাঁদের যুক্ত হতে হয়।
ফলে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য যে সময়, সেটা অনেকেই পাচ্ছেন না। তার ওপর আছে শূন্য পদ। ২০১৪ সালে একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল, তার ফল প্রকাশিত হয়নি। ২০২৩ এর শুরুর দিকে আরও একটি পরীক্ষা হয়। সেটিরও ফল বেরোয়নি। মাঝেমধ্যে কিছু নিয়োগ হয়েছে। যত নিয়োগ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কর্মী অবসরে যাচ্ছেন। তাই কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্যবিদ জাফরুল্লাহ চৌধুরী নগ্নপদ চিকিৎসকের ধারণা প্রবর্তন করেছিলেন স্বাধীনতার পর। স্বল্পশিক্ষিত নারীরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যতথ্য দিয়ে মানুষকে সহায়তা করবেন, এই ছিল তাঁর ভাবনা। সফলও হয়েছিলেন। প্রয়োজনের সময় পরিবারকল্যাণ সহকারী যে কত দরকার, তা বোঝেন কেবল বিপন্ন মায়েরা।