একসময় দেশে অ্যাসিড-সহিংসতা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেলে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির কাজে এগিয়ে আসে। গণদাবির মুখে সরকার ২০০২ সালে অ্যাসিড-সহিংসতাবিরোধী আইন করলে এ ধরনের অপরাধ অনেকটা কমে আসে।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক কালে অ্যাসিড-সহিংসতা বেড়েছে। অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্যমতে, ২০২২ সালে অ্যাসিড–সহিংসতার ১৭টি ঘটনায় ২৭ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে ১৬ নারী, ৯ পুরুষ এবং ২ শিশু রয়েছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, ১৯৯৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরে ৩ হাজার ৮৭০ জন অ্যাসিডদগ্ধ হন।
১৯৯৯ সালে ১৬৮ জন অ্যাসিড-সহিংসতার শিকার হন। ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৪৯৬ জন দগ্ধ হন। ২০০৩ সাল থেকে অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা কমতে শুরু করে। ২০১৮ সালে ২২, ২০১৯ সালে ২১, ২০২০ সালে ২২, ২০২১ সালে ১৯ এবং ২০২২ সালে বেড়ে ২৭ জন হয়েছে।
উল্লেখ্য, অ্যাসিড–সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রচার ও অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিদের সহায়তায় ২০০০ সাল থেকে প্রথম আলো কাজ করে। ওই সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এক দিনের বেতন দিয়ে একটি তহবিল গঠন করেছিলেন। পরে এই তহবিলে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
এএসএফ ও ব্র্যাকের সঙ্গেও কাজ করেছে প্রথম আলো। ২০০৯ সাল থেকে প্রথম আলো ট্রাস্টের মাধ্যমে অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে চলেছে। এ পর্যন্ত ৪৫৭ অ্যাসিডদগ্ধ ব্যক্তিকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ভূমিহীনদের বাড়ি, শিক্ষা, আইনি, চিকিৎসা ও মাসিক ভাতা দেওয়া হয়।
অ্যাসিড–সহিংসতা বৃদ্ধির হার আগের অবস্থায় না পৌঁছালেও নিরুদ্বিগ্ন থাকার সুযোগ নেই। এটি এমন ভয়াবহ অপরাধ যে এর শিকার মানুষগুলো প্রাণে বেঁচে গেলেও বাকি সময়টা দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়। অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের কাছেও তাঁরা বোঝা হয়ে পড়েন।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দুর্বল নজরদারি ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারার কারণে অ্যাসিড–সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। অ্যাসিড–সহিংসতা রোধে সরকার যে আইন করেছে, তা কি অকার্যকর হয়ে পড়েছে? যদি না হয়ে থাকে, অ্যাসিড–সহিংসতা বৃদ্ধির কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। অ্যাসিড–সহিংসতা কমে গেছে, এ ধারণা পোষণ করে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকা কিংবা আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।
অ্যাসিড–সহিংসতার মতো ভয়ংকর অপরাধ কমিয়ে আনতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কোথায় কী সমস্যা আছে, সেটা চিহ্নিত করে প্রতিকার করতে হবে। অ্যাসিড কেনাবেচার ক্ষেত্রে আইনে যেসব শর্ত আছে, সেগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।
অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। অনেক সময়ই দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ তদন্তের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যান। অ্যাসিড–সহিংসতা তখনই কমবে, যখন প্রতিটি অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।
অ্যাসিড–সহিংসতার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত ও সর্বাত্মক উদ্যোগ ছিল। নজরদারি, আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সেই উদ্যোগও জারি রাখতে হবে।