সামগ্রিকভাবে সুশাসনের ঘাটতি দেখা দিলে কেউ কেউ নিজেকে এতটাই ক্ষমতাবান বোধ করতে শুরু করেন যে ধরাকে সরা জ্ঞান করতেও দ্বিধা করেন না। তা না হলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রাস্তা বর্ধিত ও উঁচু করার প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেন জোর করে শতাধিক কৃষকের ফসলি জমির মাটি কেটে নেবে।
উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে একাধিকবার নোটিশ দিয়ে পরিবেশ ও আইনবিরোধী এ কাজে বিরত থাকার কথা বলা হলেও সরকারি সেই ফরমান ধর্তব্যে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাস্তা বর্ধিত ও উঁচু করার কাজ চলছে। কাজটি করছে মেসার্স ওশান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী, এ কাজের জন্য মাটি সরবরাহ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। এর জন্য আলাদা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই চুক্তিকে মোটামুটি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কৃষকের ফসলি জমির সর্বনাশ করে চলছে।
এক-দুজন কৃষক নন, গোপীনাথ গ্রামে শতাধিক কৃষকের জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নেওয়ার এ কাজ চলেছে এক মাসের বেশি সময় ধরে। নিরুপায় কৃষকেরা উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। তখন উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ঠিকাদারকে একাধিকবার নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চুক্তির নিয়ম উপেক্ষা করে জমি থেকে মাটি কেটেছে স্বীকার করলেও জোর করে কারও জমির মাটি কাটা হয়নি বলে যুক্তি দিয়েছে। এর যৌক্তিকতা কী? তাহলে মাটি সরবরাহের জন্য আলাদা যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেই টাকা কোথায় গেল? ঠিকাদারের কাছে ফসলি জমির মাটি মূল্যহীন বলে মনে হতেই পারে।
কিন্তু জমির উপরিস্তরের মাটি বা টপ সয়েল কেটে নেওয়ার অর্থ হলো, কৃষকের সর্বনাশ। সেই জমি আবার ফসল ফলানোর উপযোগী হতে ১৫ থেকে ২০ বছর লেগে যাবে। এ কারণেই সরকার আইন করে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করেছে। এখন গোপীনাথ গ্রামের শতাধিক কৃষকের ফসলি জমির যে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করল, তার দায় কে নেবে? সেই ক্ষতিপূরণই কে দেবে?
আমরা মনে করি, এর জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায় কোনো অংশে কম নয়। কৃষকেরা অভিযোগ জানানোর পর ডাকযোগে নোটিশ পাঠানোটাই দায়িত্ব শেষ, এটা তারা কী করে মনে করল?
কৃতকর্মের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরও জবাবদিহির বাইরে থাকতে পারে না।