তাহলে উৎসবটি কাদের জন্য ছিল

সম্পাদকীয়

প্রতিবছর ১ জানুয়ারি সারা দেশে বই উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রশ্ন হলো, উৎসবটি কাদের জন্য? যদি এটি শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে থাকে, তাহলে বছরের প্রথম দিনই তাদের হাতে সব বই পৌঁছানোর কথা। আর বই উৎসব যদি কেবল সরকারের উন্নয়ন প্রচারের কৌশল হয়ে থাকে, সেটি ভিন্ন কথা।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১ জানুয়ারি সারা দেশে উৎসব করে বই বিতরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সব বই পায়নি। উৎসবের দিন ধারণা দেওয়া হয়েছিল, দু-এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়ে যাবে। কোনো কোনো শ্রেণিতে বেশির ভাগ বই পৌঁছায়নি। কবে নাগাদ শিক্ষার্থীরা সেসব বই পাবে, সে বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কিছু জানানো হয়নি।

এ বছর ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩৪ কোটি পাঠ্যবই বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে ৯ কোটি ৬৬ লাখের বেশি এবং মাধ্যমিকে ২৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজারের বেশি বই। অনেক জায়গায় বই গেলেও বিতরণ সমস্যায় শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো যায়নি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৫০ লাখ ২৩ হাজারের বেশি বই ছাপা বা ছাপার পর উপজেলা পর্যায়ে পাঠাতে ছাড়পত্র হয়নি।

এবার প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে বই দেওয়া হচ্ছে। আগের শিক্ষাক্রমের কোনো বই না পৌঁছালে শিক্ষক হয়তো পুরোনো বই দিয়েও পাঠদান চালিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় যে তিনটি শ্রেণিতে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হয়েছে, সেসব শ্রেণির বই হাতে না পেলে পাঠদান অসম্ভব।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে রাজধানী ঢাকা, পাবনা, গাইবান্ধা, ভোলা, জামালপুর, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সরেজমিন এবং ওই সব এলাকার শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সব শ্রেণির সব শিক্ষার্থী বিনা মূল্যের নতুন বই হাতে পায়নি। যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁরা আশা করছেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পেয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই নিয়ে প্রতিবছরই নানা সমস্যা দেখা দেয়। এবারের সমস্যাটি আরও গুরুতর। একদিকে কাগজের সংকট, অন্যদিকে তাড়াহুড়া করে বছরের শেষ দিকে বই ছাপার কাজ শুরু করায় বইয়ে বেশ ভুল থেকে গেছে। ছাপার মানও অত্যন্ত খারাপ। কয়েকটি পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক ওঠায় একাধিক তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে ভুল থাকলে শিক্ষার্থীরাও ভুল শিখবে।

কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা ও সমাধান দিয়েছে, তার কোনোটাই প্রহণযোগ্য নয়। বলা হয়েছে, বইয়ের যেসব তথ্যগত ভুল আছে, সেগুলো শিক্ষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁরা সঠিকটাই শেখাবেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অবিলম্বে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছাবে আশা করি। একই সঙ্গে যাদের কারণে বই মুদ্রণ ও বিতরণে দেরি হলো, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। প্রতিবছরই বই উৎসবের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এ বিড়ম্বনা ও কর্তৃপক্ষের এ খামখেয়ালি চলতে পারে না। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থেকে এই যে একটি মাস হারিয়ে গেল, তার প্রতিকার কী।