বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের সূচকে ধীরে হলেও বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতি ইতিবাচক ঘটনা। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত সূচকে চলতি বছর বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। গত বছর ছিল ৯৮তম এবং তার আগের বছর ১০৪তম।
অন্যদিকে কানাডার প্রতিষ্ঠান অ্যারটন ক্যাপিটালের সূচকে ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সংযুক্ত আরব আমিরাতের। এ সূচকে দুই ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ ৯০তম অবস্থানে উঠে এসেছে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা আগাম ভিসা ছাড়া বিশ্বের ৪২টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। গত বছর বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা আগাম ভিসা ছাড়া ৪০টি দেশে ভ্রমণ করতে পারতেন।
ওই সময় সূচকে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে ছিল লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়া। এবারও উত্তর কোরিয়ার সূচক বাংলাদেশের সমান।
২০২৪ সালের সূচকে সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টধারী দেশ হলো ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, সিঙ্গাপুর ও স্পেন। এসব দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৯৪টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। গত বছরের সূচকে এককভাবে শীর্ষে ছিল সিঙ্গাপুর, দ্বিতীয় অবস্থানে জাপান। এবারের সূচকে ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইডেন একই অবস্থানে আছে। সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে আগাম ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সূচকে বাংলাদেশের ঠিক আগে—৯৬তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। পরের ৯৮তম অবস্থানে নেপাল, লিবিয়া ও ফিলিস্তিন। ভারতের অবস্থান ৮০তম। ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা আগাম ভিসা ছাড়া ৬২টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। পাকিস্তানের অবস্থান ১০১তম—বাংলাদেশের নিচে। পাকিস্তানের ওপরে থাকা যথেষ্ট অগ্রগতির লক্ষণ নয়।
কোনো দেশের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া কিংবা ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে কতটি দেশে যাওয়া যায়, তার ওপর ভিত্তি করে শক্তিশালী পাসপোর্টের এ সূচক তৈরি করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা ভিসা ছাড়া ১৯টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন। অন অ্যারাইভাল ভিসা-সুবিধা বা পৌঁছানোর পর ভিসা নিতে হয় ৩১টি দেশে। আর ১৪৮টি দেশে ভ্রমণে আগাম ভিসা প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশের সীমারেখা অতিক্রম করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করতে যাচ্ছে, তখন পাসপোর্টের ক্ষেত্রেই–বা পিছিয়ে থাকবে কেন?
যে দেশের পাসপোর্টধারীরা যত বেশি দেশ আগাম পাসপোর্ট ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন, সেই দেশের পাসপোর্টকে তত শক্তিশালী ভাবা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি মন্থর। একশ্রেণির আদম ব্যাপারী পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ভুয়া নাম-ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট বের করে আনেন। এই প্রক্রিয়ায় বহু রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকেও বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে, যঁাদের অনেকে বিদেশে গিয়ে ধরা পড়েছেন, কেউ কেউ ফেরত আসতেও বাধ্য হয়েছেন।
বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন কেউ যাতে কোনোভাবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট না পান, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ সজাগ থাকা প্রয়োজন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে গলাকাটা পাসপোর্টের যুগ শেষ হলেও ভুয়া নাম-ঠিকানায় পাসপোর্ট করার ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপে সেটা আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। এরপরও যাঁরা হীন স্বার্থ উদ্ধারে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অর্থনৈতিক সক্ষমতার সঙ্গে পাসপোর্ট শক্তিশালী হওয়ার একটা নিগূঢ় সম্পর্ক আছে। যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি মজবুত, সেসব দেশের পাসপোর্টও বেশি শক্তিশালী। অতএব, পাসপোর্টের মান উন্নত করতে হলে অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বাড়ানোর বিকল্প নেই।