সরকার যখন দেশবাসীকে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের কাহিনি শোনাচ্ছে, তখন ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবিতে রোগী ও স্বজনেরা রাস্তায় নেমে পুলিশের লাঠিপেটা খাচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের কিডনি রোগীদের জন্য ২০১৭ সালের ৫ মার্চ ৩১টি মেশিন নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারটি চালু করা হয়। স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান এ দায়িত্ব পালন করছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাতটি মেশিনের বেশি চালু আছে। হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তুকিসহ একবার ডায়ালাইসিস নিলে যেখানে খরচ হয় ৪১৮ টাকা, সেখানে স্যানডোর ডায়ালাইসিস সার্ভিস নিচ্ছে ৫৩৫ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটি ১ জানুয়ারি থেকে একবারের ডায়ালাইসিস ফি ভর্তুকিতে ৫১০ টাকার স্থলে ৫৩৫ টাকা এবং ভর্তুকি ছাড়া ২ হাজার ৭৮৫ টাকার স্থলে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা ধার্য করে। এর পাশাপাশি এত দিন যেসব রোগী মাসে ৮ থেকে ১২টি ডায়ালাইসিসে সেবা ভর্তুকি সেবা পেতেন, তাঁরা এখন থেকে ৪ থেকে ৬টির ক্ষেত্রে এ সুবিধা পাবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়। বাকিটা করতে হবে ২ হাজার ৯৩৫ টাকায়।
এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গত শনিবার থেকে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা বিক্ষোভ করে আসছিলেন। মঙ্গলবার প্রায় দুই শ লোক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেক রোগী সড়কে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান। মো. আসাদুল হক নামের একজন রোগী পুলিশের মারধরে আহত হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কেবল আসাদুল হক এক নন, আরও অনেক রোগী পুলিশের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়।
এ ঘটনা দেশে স্বাস্থ্যসেবার রুগ্ণ ও করুণ চিত্রই তুলে ধরে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠান কেন নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি না করে ভাড়া করা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ডায়ালাইসিস করাবে? চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ভর্তুকিতে সাড়ে ছয় হাজার জনের ডায়ালাইসিস করানোর কথা রয়েছে। কিন্তু সেখানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও কোনো জবাব আসেনি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডায়ালাইসিস বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কেন তারা নিজের সক্ষমতা না বাড়িয়ে ভাড়ায় ডায়ালাইসিস চিকিৎসা করাচ্ছে, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই।
উন্নত দেশ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায়ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশে বরাদ্দ কম। আবার যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার একটা বড় অংশ খরচ হয় অবকাঠামো নির্মাণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে। ফলে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং নিরুপায় হয়ে তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। রোগীরা আর কত লাঠিপেটা খেলে তাদের চৈতন্যোদয় হবে?
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবার বর্ধিত ফি কমানো হোক। ডায়ালাইসিসের মতো জরুরি চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে মানুষ লাঠিপেটার শিকার হবে আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবেন, এটা হতে পারে না।