মামলার ধার্য তারিখ জানতে চট্টগ্রামে বিচারপ্রার্থীদের আর আদালতে ছুটতে হচ্ছে না। মামলার তথ্য এখন রীতিমতো তাঁদের হাতের তালুতে। যেকোনো স্মার্টফোন থেকে গুগলে মামলার কার্যতালিকা লিখে সার্চ দিলে ই-কার্যতালিকা আসছে। সেখানে গিয়ে কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করলেই মামলার ধার্য দিন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
গুগলে সার্চ দেওয়া ছাড়াও স্মার্টফোনে ‘আমার আদালত’ অ্যাপ থেকে প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পরে জেলা ও সর্বশেষ সংশ্লিষ্ট আদালতের নাম নির্বাচন করে বিচারপ্রার্থীরা তাঁদের মামলার সর্বশেষ আদেশ, পরবর্তী তারিখ এবং মামলার অবস্থা জানতে পারবেন।
সাক্ষী, অভিযোগ গঠন, যুক্তিতর্কের বিষয়েও লেখা থাকে। গুগল প্লে স্টোর থেকে ‘আমার আদালত’ সার্চ করে যে কেউ এ অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবেন।
অথচ সপ্তাহখানেক আগেও শুধু মামলার তারিখ জানতে বিচারপ্রার্থীদের আইনজীবীর কাছে দৌড়াতে হতো। আইনজীবীর সহকারীকে (মুনশি) দু-তিন শ টাকা দিলে তারপর মিলত তথ্য। এখন আর সেই কষ্ট করতে হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনে ছোটখাটো বিষয় নয়—এখানে আদালতই আছে ৭৬টি। আর বিচারাধীন মামলার সংখ্যাও ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩০০। প্রতিদিন ১০ হাজার মানুষ আসেন চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশ এলাকা থেকে।
সরকারের অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই) প্রোগ্রামের সহযোগিতায় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে এই ডিজিটাল সেবা বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করবে আশা করি। কিন্তু প্রথম আলো জানাচ্ছে, এখনো বিচারপ্রার্থীদের সবাই এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানেন না।
কেবল কয়েকটি আদালতে বিচারপ্রার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নোটিশ টাঙানো হয়েছে। এতে ‘আমার আদালত’ (মাই কোর্ট) অ্যাপস ব্যবহার করে কীভাবে বিচারিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যাবে, তার উল্লেখ আছে। আমরা আশা করব ৭২টি আদালতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ ব্যাপারে সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিঃসংশয় হওয়া যাচ্ছে না একটি কারণে। তা হলো এই ব্যবস্থা কতটা সুরক্ষিত। সাম্প্রতিক সময়ে আমার জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ সাইটগুলোর তথ্য হাতছাড়া হয়ে যেতে দেখেছি।
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, মামলার দিন-তারিখ থেকে শুরু করে সাক্ষী ও সর্বশেষ অবস্থা—সবকিছুই এখন বিচারপ্রার্থী অনলাইনে দেখতে পাবেন। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থার যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করে তবেই এটির ব্যবহার শুরু করেছে। একজন বিচারপ্রার্থী আদালতে যান তাঁর জীবন-মরণ সমস্যা নিয়ে।
ওয়েবসাইটে থাকা মামলার খুঁটিনাটি তথ্য উন্মুক্ত হয়ে পড়লে স্বস্তির বদলে অস্বস্তি ও ভোগান্তি দুই-ই বাড়বে। সেই সঙ্গে স্পর্শকাতর মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষী সুরক্ষাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদিকেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।