জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রটি অবহেলিত ও বন্ধই থাকবে?

সম্পাদকীয়

চলছে ভাষার মাস। শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। নতুন নতুন বই প্রকাশ ও কেনাবেচার আনন্দ বিরাজমান। পাশাপাশি দেখি, বইয়ের পাঠক কমে যাওয়া নিয়ে লেখক ও প্রকাশকদের হা-হুতাশও। একটা সময় কিন্তু সে পরিস্থিতি ছিল না। শহর, মফস্‌সল, গ্রামে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার ছিল। সেসব গ্রন্থাগার ঘিরে মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না।

তখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগ ছিল না, ছিল না অনলাইন বা স্মার্টফোন। কিন্তু এখনকার মতো পাঠকের অভাব ছিল না। নিঃসন্দেহে তখন পাঠক তৈরিতে এসব গ্রন্থাগারের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। দুঃখজনক হচ্ছে, নতুন গ্রন্থাগার গড়ে তো উঠছেই না, বরং কালের পরিক্রমায় পুরোনোগুলোর দশাও করুণ।

যেমন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের কচুয়া বাজারে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারটি। উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে প্রতিষ্ঠিত গ্রন্থাগারটি ১০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এটি আবার চালুরও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, স্থানীয় বিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের অবসরে বাজে আড্ডা থেকে ফেরাতে এ গ্রন্থাগারের যাত্রা। শিক্ষানুরাগী স্থানীয় জমিদার কাজী সরোয়ার উদ্দিন ও চিকিৎসক হাবিবুর রহমান গ্রন্থাগারটি করে দেন। শুরুতে একটি টিনের চালার ঘরে ৩০০ বই দিয়ে এটির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল কচুয়াবাজার পাবলিক লাইব্রেরি।

পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন যশোর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এম এন খান বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে গ্রন্থাগারটি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং একটি ভবন করে দেন। এলাকাবাসী তখন তাঁর সম্মানে গ্রন্থাগারটির নাম দেন এম এন খান পাবলিক লাইব্রেরি অ্যান্ড ভিলেজ হল।

এ গ্রন্থাগার ঘিরে ছিলে গ্রামবাসীর নানা উচ্ছ্বাস। কলকাতা থেকে এখানে পত্রিকা আসত। এমনকি কেনা হয়েছিল রেডিও। যার মাধ্যমে মানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ দেশ-বিদেশের নানা খবরাখবর পেত। গ্রন্থাগারটি সমাজে শিক্ষার আলো ছড়াতে বড় ভূমিকা রাখে। এখানে পড়াশোনা করে অনেক শিক্ষার্থী পরবর্তী জীবনে সরকারের সচিব, আমলা, নানা পেশাজীবী ও জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গ্রন্থাগারটি এক দশক ধরে বন্ধ হয়ে আছে।

স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও এটির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। গ্রন্থাগারটিতে আছে চার হাজার বইয়ের বিশাল সম্ভার। মূল্যবান এ সংগ্রহও নষ্ট হতে বসেছে।

শৈলকুপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেরিতে হলেও গ্রন্থাগারটি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বদলি হয়ে গেলে উদ্যোগটিও থমকে যায়। তাহলে কি ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারটি এভাবে করুণ অবস্থায় পড়ে থাকবে?

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে কি শিক্ষানুরাগী কোনো কর্মকর্তা নেই? এখান থেকে উঠে আসা প্রাক্তন ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাই–বা কোথায়? সবাই মিলে একটি সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হোক।