দখলের কোনো সুযোগ রাখা যাবে না

সম্পাদকীয়

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনো এলাকায় একটি পুকুর বা জলাশয় থাকা কী পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ, এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেই তা প্রকাশ হয়ে পড়ে।

এ ছাড়া ভয়াবহ দাবদাহ কমাতেও পুকুর বা জলাশয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বারবার উঠে আসছে। অথচ নগরায়ণের নামে শহরগুলোয় অধিকাংশ পুকুর বা জলাশয় উধাও হয়ে গেল, সে ব্যাপারে যতটা ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণের দরকার ছিল, তা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।

আইন আছে, আইন প্রয়োগ করার মানুষ আছে, কিন্তু সেগুলোর কিছুই আমরা দেখি না। তবে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের একটি সরকারি পুকুর রক্ষায় প্রশাসনের তৎপরতাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মির্জাপুরের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গত বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সে কাজ বন্ধ করে দেন এবং অভিযুক্ত মাটি ব্যবসায়ীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। মুচলেকা দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পাঁচ বছর আগে থেকে পুকুরটি ভরাটের চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। পুকুরটি দখলের অপচেষ্টা কয়েকবার বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। সেখানে সতর্কতা জারি করে সাইনবোর্ডও লাগিয়ে দিয়েছিল ভূমি কার্যালয়। সেই সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলেন মাটি ব্যবসায়ীরা।

মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মির্জাপুর বাজারসংলগ্ন পুকুরটির দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ঘনবসতি এলাকা। সরকারি ওই পুকুর ভরাট হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়বে। অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য পুকুরের পানি খুবই জরুরি। যেখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জলাশয় তৈরির ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, সেখানে সরকারি এই পুকুর ভরাটের চেষ্টা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারি ওই পুকুর ভরাটের চেষ্টায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া জরিমানা দেওয়া ব্যক্তি এবাদত মৃধাকে পুকুর থেকে মাটি তুলে নিতে বলা হয়েছে।

আমরা সহকারী কমিশনারের কথায় আস্থা রাখতে চাই এবং পুকুরটি উদ্ধারে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা অটুট থাকুক। পুকুরটির পাড় বাঁধাই করে সংরক্ষণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হোক।

তবে বারবার যেভাবে পুকুরটি দখলের চেষ্টা চলছে, সেখানে জরিমানা দিয়ে দখলদারকে ছেড়ে দেওয়াকে আমরা যথেষ্ট মনে করি না। এতে দখলদারেরা পরবর্তী সময়ে আবারও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। পুকুর বা জলাশয় রক্ষায় আইন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। আমরা মনে করি, স্থানীয় প্রশাসনের এ ব্যাপারে আরও কঠোর হওয়া দরকার।