কুমারকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন

সম্পাদকীয়

দখল ও দূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য ২০২০ সালে উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা বলে ঘোষণা করেন। এর ফলে মানুষের মতো নদীও কিছু আইনি অধিকার পেয়েছে। এর মানে নদীর জায়গা দখল ও দূষণের শিকার হলে কিংবা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে নদী আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।

নদী যেহেতু নিজে আদালতে যেতে পারে না, সেহেতু নদীর আইনি অভিভাবক করা হয়েছে নদী রক্ষা কমিশনকে। স্থানীয় প্রশাসন এ কাজে কমিশনকে সহায়তা করবে, নদীর ক্ষতির সঙ্গে যে–ই জড়িত থাক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। অথচ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকাণ্ড সেই পুরোনো প্রবাদ, রক্ষক যখন ভক্ষক—এ কথাই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, খোদ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য তারা কুমার নদের কিছু অংশ ভরাট করে ফেলেছে। এতে নদে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, আবার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদের এই কর্মকাণ্ড সুস্পষ্টভাবে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের লঙ্ঘন।

শ্রীপুর উপজেলায় কোনো স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড না থাকায় সেখানে একটা বাসস্ট্যান্ড করা জরুরি। কিন্তু নদের জায়গা ভরাট করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করে যে দৃষ্টান্ত উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ দেখাল, সেটা শুধু ক্ষমতার প্রদর্শনই নয়, দখলদারদের উৎসাহিত করারও উদ্যোগ। কেননা প্রথমে যখন ২০২০ সালে নদের জায়গা ভরাট করা হয়, সে সময় প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশিত হলে সমালোচনার মুখে মাটি ভরাটের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৩ সালের শেষে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা পরিষদ মিলে নদের জায়গা ভরাট করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে ইউএনও কার্যালয় থেকে পাওয়া ওই তথ্যসূত্রে জানা যাচ্ছে, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের ২০২৩ সালের জুলাই মাসের মাসিক সভায় কুমার নদ ভরাট করে বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং উপজেলা প্রকৌশলীকে।

প্রশ্ন হচ্ছে, উপজেলা পরিষদ আর উপজেলা প্রশাসন কোন এখতিয়ারবলে কুমার নদের একাংশ এভাবে ভরাট করার সিদ্ধান্ত নিল? তারা যে আইনবিরুদ্ধ কাজ করেছে, তার জবাবদিহি কে করবে? জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই। সবার আগে ভরাট করা অংশ পুনঃখনন করে নদকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক। কুমার নদ রক্ষা করে অন্য জায়গায় বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হোক।