দেশে যেকোনো অজুহাতে গাছ কাটা এখন সহজই হয়ে গেছে বলা যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। কোনো প্রতিবাদকেই তাঁরা তোয়াক্কা করছেন না। পরিবেশ রক্ষায় জবাবদিহি প্রদর্শনের বিষয়টি কতটা তলানিতে গিয়ে ঠেকলে এমনটি ঘটে, সেটিই প্রকাশিত হয় গাছ নিধনের ক্ষেত্রে। ফলে আরও বেপরোয়াভাবে চলছে গাছ নিধন।
যেমনটি আমরা দেখতে পেলাম নরসিংদীর মনোহরদীর গোতাশিয়া ইউনিয়নে। সেখানে খাল খননের অজুহাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে কেটে ফেলা হয়েছে কয়েক শ গাছ।
রীতিমতো মাইকিং করে পরিবেশের ওপর এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন তিনি। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে যেখানে তিনি পরিবেশ রক্ষায় জোর দেবেন, সেখানে তিনি এমন কাজ করতেই পারেন না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সেচকাজের উপযুক্ত করতে স্থানীয় নড়িয়া খালের প্রায় সাড়ে পাঁচ শ মিটার পর্যন্ত খনন করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। বাকিটুকুতে খনন করা যাচ্ছিল না। কারণ, খালের দুই পাড়ে খননযন্ত্র প্রবেশের কোনো রাস্তা নেই। সেই অজুহাতে সেখানে থাকা গাছ কাটার নির্দেশ দেন গোতাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল বরকত। এর জন্য টানা তিন দিন ধরে মাইকিং চালানো হয়।
অথচ খালটির বাকি এই অংশে খননের কোনো পরিকল্পনা, বাজেট বা বরাদ্দ কিছুই ছিল না বিএডিসির। তার মানে স্বপ্রণোদিত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এ কাজ করেছেন। খালের ওই অংশে হাজারখানেক গাছ আছে। মাইকে ঘোষণা শুনে স্থানীয় লোকজন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁদের সীমানার গাছ ব্যাপারীদের কাছে এক-তৃতীয়াংশ দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। অর্ধেকের বেশি গাছ এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে তালগাছই আছে শতাধিক।
স্থানীয় কৃষকদের বক্তব্য, পানির অভাবে খালটি তাঁদের কোনো কাজে আসে না। একমাত্র বর্ষায় পানি এলে এই খাল কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। বড় বড় সব গাছের ছায়ায় কৃষকেরা বিশ্রাম নিতেন। গাছগুলো কেটে ফেলায় এখন আর তা-ও সম্ভব হবে না। এখানে পরিবেশের ক্ষতি আরও বিপুল, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গাছগুলো কেটে কম দামে বিক্রি করার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইউপি চেয়ারম্যান এ অপকর্ম করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বজ্রপাত নিরোধে ভূমিকা রাখা বিপুল তালগাছ নিধনের কারণেও তাঁকে কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যায় না।
ঘটনা শুনে আর একটি গাছও যাতে কাটা না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম। কথা হচ্ছে, তিন দিন ধরে গাছ কাটার জন্য মাইকিং করা হলো, তা স্থানীয় প্রশাসন কেন জানতে পারল না। এ দায় কি তাদেরও নিতে হবে না?