গত শনিবার শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ একযোগে বাকি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যোগ্য ব্যক্তির অভাব আছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০টির বেশি স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টির বেশি এখন অভিভাবকহীন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদের পাশাপাশি সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ অনেক প্রশাসনিক পদ শূন্য। এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের খবর নেই। শূন্য আছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের পদও।
তবে উপাচার্য পদ শূন্য থাকলেও যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলতে পারে, সেটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়েছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও সহ–উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পরও কবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে, সেটা জানানো হয়নি।
উল্লেখ্য, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেওয়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাধিকারীরা হয় স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন অথবা তাঁদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষা উপদেষ্টা যে শিগগিরই শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন, তাতে পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়া যায় না।
শিক্ষা উপদেষ্টার যে কথাটি আমাদের ভীষণ উদ্বিগ্ন করে, ‘চর দখলের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের মহড়া চলছে’। অনেক কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যথাক্রমে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যদিও শিক্ষা উপদেষ্টা এক সপ্তাহ আগেই কাউকে জবরদস্তিমূলক পদত্যাগে বাধ্য না করার কথা বলেছিলেন। কে শোনে কার কথা? আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে, অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তার প্রতিকার তো একজনকে গায়ের জোরে চেয়ার থেকে তুলে দিয়ে আরেকজনকে বসিয়ে দেওয়া নয়। যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদায়নের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু যাঁরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি, তাঁদের অপমান ও অপদস্থ করার অধিকার কারও নেই। আর এটা যে কেবল দলীয়করণের কারণে হচ্ছে, তা–ও নয়। ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের কারণেও এটা হচ্ছে। এক দল শিক্ষার্থী গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্কুল–কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্র আদায় করে নেবে, পদত্যাগ না করলে তাঁকে অপমান–অপদস্থ করা হবে—এটা চলতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো সত্য হলে দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।
শিক্ষা উপদেষ্টা যেমন বলেছেন, শিক্ষাঙ্গনে তো চর দখলের মতো মহড়া চলতে পারে না। তাহলে আইনের শাসন থাকে কোথাও? কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আইনানুগভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে কোনোভাবেই জবরদস্তি করতে দেওয়া যাবে না। শিক্ষা উপদেষ্টা কারিকুলাম নিয়েও কথা বলেছেন। এখানে সময়ের বাধ্যবাধকতা আছে। আগামী জানুয়ারিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে। তার আগে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সময় খুবই কম।
ইতিমধ্যে আমরা দুই মাস শিক্ষাহীন অবস্থায় কাটিয়েছি। এটি আর কোনোভাবে প্রলম্বিত হতে দেওয়া যায় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর শিক্ষকদের ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তাঁদের সবাই যোগ দিয়েছেন কি না, সেটাও তদারক করার দায়িত্ব সরকারের।