ঘুষ চাওয়া ঠিকাদারকে কোনোভাবে ছাড় নয়

সম্পাদকীয়

দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁরা দুস্থ ও সামর্থ্যহীন, তাঁদের ও তাঁদের পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে সরকার বীর নিবাস প্রকল্প নিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বীর নিবাস হস্তান্তরও হয়ে গেছে। অনেক উপজেলায় নিবাসগুলো নির্মাণাধীন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো এ প্রকল্পেও অনেক জায়গায় গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, ঘরের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের পরিবারের কাছে অর্থ চাওয়া হচ্ছে। বিষয়টি কতটা গুরুতর, তা প্রতীয়মান হয়েছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায়। অনিয়ম ও ঘুষ দাবির কারণে সেখানে চলমান বীর নিবাস প্রকল্পটিতে চরম বিশৃঙ্খলা ও অ্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সোনাইমুড়ীতে ১০৬টি বীর নিবাস তৈরির কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ঘরগুলোর মধ্যে আটটি বরাদ্দ হয়েছে অম্বরনগর ইউনিয়নের আটজন মুক্তিযোদ্ধার নামে। আটটির মধ্যে তিনটি বীর নিবাস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে।

ঠিকাদার কোনোটির ৩০ শতাংশ ও কোনোটির ৪০ শতাংশ কাজ করার পর চলে গেছেন।

অম্বরনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম তাঁর জন্য বরাদ্দকৃত বীর নিবাসটি দেখে যেতে পারলেন না। জীর্ণ টিনের ঘরে রোগশোকে শয্যাশায়ী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা গত বুধবার শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি অভিযোগ করে গেছেন, এক লাখ টাকা ঘুষ না দেওয়ায় ঠিকাদার তাঁর বীর নিবাস তৈরির কাজ শুরু করছেন না। শুধু তা–ই নয়, যে তিনটি বীর নিবাসের কাজ শুরু হয়েছে, সেগুলো নিয়েও হয়েছে চরম অনিয়ম। তিনজন মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেকের কাছ থেকে রড দিয়ে মজবুত করে কাজ করার কথা বলে নেওয়া হয়েছে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। টাকা নিয়েও নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ। সেই তিন ঘরের কাজও শেষ করছেন না ঠিকাদার।

এক লাখ টাকা দিতে না পারায় আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম শাহজাহানের বীর নিবাসের কাজও শুরু করেননি ঠিকাদার। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ায় ঠিকমতো হাঁটতে না পারা শাহজাহান বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কখনো ভাবিনি কোনো কাজে ঘুষ দিতে হবে।’ ভুক্তভোগীদের আরও অভিযোগ, সরকারি কোনো প্রকৌশলী কখনো কাজ দেখতে আসেননি। তাই ঠিকাদার তাঁর ইচ্ছেমতো কাজ করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বক্তব্য, পাঁচ মাস আগে উপজেলাটিতে যোগ দিয়ে তিনি বীর নিবাস নির্মাণ নিয়ে ঠিকাদারের টালবাহানার বিষয়টি অবগত হন। তাৎক্ষণিক তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। চেষ্টা করছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজগুলো শেষ করার জন্য।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে হয়রানি ও অসম্মান করার কোনো মানে হয় না। অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।