কক্সবাজার জেলার বিশাল বনভূমি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এ বনভূমির চরম ক্ষতি তো করেছেই, সেখানে স্থানীয় লোকজনও এর জন্য কম দায়ী নয়। আবার বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং বনভূমির ভেতরে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণেও সেটা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। গত বুধবার টেকনাফের হাজমপাড়া বনভূমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তারা। সেখানে স্থানীয় জনতা যে কাণ্ড ঘটাল, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের টেকনাফের হাজমপাড়া এলাকায় বনভূমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণকাজে বাধা দিতে গেলে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয় জনতা। বনকর্মীদের উদ্ধার করতে গিয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তাও গুরুতর আহত হন। শুধু তা–ই নয়, পরে রাত নয়টার দিকে র্যাব ও পুলিশের সহযোগিতায় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
কক্সবাজার জেলায় বনভূমি রক্ষায় বনকর্মীদের ওপর দায়িত্ব পালনকালে এবারই প্রথম হামলার ঘটনা ঘটেনি। গত এপ্রিলে উখিয়ায় পাহাড়খেকো ও বালু ব্যবসায়ীদের হাতে হত্যার শিকার হন একজন বিট কর্মকর্তা। তিনি পাহাড়খেকো ও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযান চালানোয় তাঁদের চক্ষুশূল হন। সে ঘটনা গোটা দেশে আলোচনা তৈরি করে। ফলে কক্সবাজারে বনকর্মীরা কতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, এসব ঘটনায় তা প্রতীয়মান হয়।
হাজমপাড়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার অতিরিক্ত নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, এখন হাজমপাড়া এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
শুরুতেই যদি বনভূমি রক্ষায় তৎপর হওয়া যেত, তাহলে দখলবাজেরা এতটা সংঘবদ্ধ হতে পারত না। এখন অবৈধ স্থাপনা তোলার সময় বাধা দেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কিন্তু ছাড় দিলে আরও বনভূমি গ্রাস হয়ে যাবে, সেটিও সত্য। ফলে দখলদার স্থানীয় জনতাকে রুখতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে। এখানে শুধু বলপ্রয়োগ নয়, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবং অন্যত্র পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়ে বনভূমি উদ্ধার করতে হবে। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি ধৈর্য ও কৌশলের সঙ্গেই মোকাবিলা করবে।