পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কেমন প্রতিবেদন

সম্পাদকীয়

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মহেশখালী, চকরিয়াসহ গোটা কক্সবাজার জেলায় পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড একের পর এক সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। ওই অঞ্চলের পরিবেশ–প্রকৃতিকে বিবেচনায় না নিয়েই একের পর এক বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিগত ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রভাবেও একের পর এক পরিবেশ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। দখলদারদের ঠেকাতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কেউ। প্রকৃত দখলদারদের বাঁচাতে প্রচেষ্টা চালানোর অভিযোগও উঠেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চকরিয়ার বদরখালী উপকূলে কয়েক শ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। এরপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য বদরখালী নদীতীরের তিন কিলোমিটারজুড়ে চার দফায় অন্তত ৪০ হাজার কেওড়া ও বাইনগাছের চারা রোপণ করে বেসরকারি সংস্থা উবিনীগ। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গাছগুলোর উচ্চতা দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ ফুট। কিন্তু এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় শতাধিক দখলদার কয়েক দফায় হাজারো গাছ কেটে চিংড়িরঘের নির্মাণ করেন। দখলদারদের সবাই কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলমের অনুসারী।

এ ঘটনায় গত ১৪ জানুয়ারি প্রথম আলো ‘প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘেরের বাঁধ’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর ১৭ জানুয়ারি চকরিয়া উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা করেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে ৩০ দিনের মধ্যে আদালত প্রতিবেদন দিতে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালককে নির্দেশ দেন। এর প্রায় আট মাস পর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেই প্রতিবেদনে প্রকৃত দখলদারদের নাম বাদ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকা এমন ব্যক্তিদের নাম, যাঁরা কেউ লবণচাষি, কৃষক, নৈশপ্রহরী ও দোকানের কর্মচারী।

উবিনীগের দাবি, প্যারাবন নিধনে জড়িত প্রায় ৪০ জনের একটি তালিকা এবং প্যারাবন নিধনের ভিডিও চিত্র পরিবেশ অধিদপ্তরে সরবরাহ করা হয়েছিল। ভিডিওতে প্যারাবন নিধনকারী ব্যক্তিদের সহজে শনাক্ত করা যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের (সাক্ষী) নামও সংগ্রহ করা হয়েছিল। এরপরও প্রকৃত দখলদারদের নাম বাদ দিয়ে নিরীহ ও দরিদ্র ১৩ জনের নামে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শকের বক্তব্য, সরেজমিন অনুসন্ধান করে প্যারাবন নিধনের সঙ্গে তিনি যাঁদের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন, তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করে পুনরায় তদন্ত চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে উবিনীগ। আমরা আশা করব, পুনরায় তদন্ত করে প্রকৃত দখলদারদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা তাদেরই খণ্ডাতে হবে। স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে সেটি তাদেরই প্রমাণ করতে হবে।