আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে নির্দিষ্ট ঠিকানা করে দিতে সচেষ্ট সরকার। এ জন্য গোটা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীন করা হচ্ছে ঘর। অসংখ্য পরিবারকে সেই ঘর উপহার দেওয়া হয়। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই ছিল নানা অনিয়মের অভিযোগ।

বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিয়েছে। এরপরও এ প্রকল্প নিয়ে সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না। যেমন বিচ্ছিন্ন জায়গায় কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়া ঘর করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানে মানুষের স্বাভাবিক বসবাসের কোনো সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়নি।

দিন শেষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো পড়ে থাকে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নে এ রকম ৫১০টি ঘরই পড়ে আছে। সেগুলো এখন অপরাধী ও মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নড়িয়ার নওপাড়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর দুর্গম চরে পানসাড়া, পানসাড়া-২ ও পানসাড়া-৩ নামে তিনটি প্রকল্পে নির্মাণ করা হয় মোট ৫৪০টি ঘর। এর মধ্যে ৫১০টি ঘরেই কেউ থাকেন না। দুই বছর আগে প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও এখনো সেখানকার সব ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায়নি।

একে তো দুর্গম চর, যাতায়াতের সড়ক নেই, আশপাশে কোনো জনবসতিও নেই। বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায় চর। আছে নদীভাঙনের হুমকিও। ফলে মানুষ সেখানে যেতে আগ্রহী নন। এখন ঘরগুলো খালি পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিন শেষে নষ্ট হচ্ছে সরকারি অর্থ। সেই সঙ্গে যে লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে, তা পূরণ হচ্ছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

চারদিকে পদ্মা নদীবেষ্টিত ইউনিয়নটিতে চরের নিচু জায়গা ভরাট করে এ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। টিনের চাল ও ইটের দেয়াল দিয়ে ১০৮টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে পাঁচটি ঘর আছে। সঙ্গে সামনে ও পেছনে বারান্দা, গভীর নলকূপ, শৌচাগার, গোসলখানা আছে। প্রথম আলোর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সারিবদ্ধ ঘরগুলো দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে ঘাস জন্মে গেছে। মানুষের উপস্থিতি বা কোলাহল তেমন একটা নেই। এতগুলো ঘরের মধ্যে শুধু ৩০টি পরিবার থাকছে, তা–ও গবাদিপশু লালন–পালন ও কৃষিজমির ফসল রাখার জন্য।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের দাবি, এমন জায়গায় প্রকল্প করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাশেদউজ্জামানের বক্তব্য, ঘর ও জমি বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন নেওয়া হচ্ছে।

এটি চলমান প্রক্রিয়া। নওপাড়ার ৫১০টি ঘরও দ্রুত বরাদ্দ দেওয়া হবে। তাঁর এ বক্তব্যের দ্রুত প্রতিফলন আমরা দেখতে চাই। আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে মানুষের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়েও আশা করি তিনি গুরুত্ব দেবেন।