মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ৪৭ টন সার জব্দ করাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। প্রথম আলোর সংবাদ থেকে জানা যায়, ৪৭ দশমিক ৪৫ টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) মানিকগঞ্জ বিএডিসির গুদাম থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মেসার্স বিষ্ণু অ্যান্ড ব্রাদার্স ও মেসার্স নারায়ণ বণিক নামের দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নেওয়া হচ্ছিল।
এর আগে গত জুন মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় পাচারের সময় ৩ হাজার কেজি বা ৭৫ মণ মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সারসহ একটি পিকআপ জব্দ করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে নাটোর থেকে পাচার করার সময় সরকারি ১ হাজার ২০০ বস্তা ডিএপি সার উদ্ধার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় ছয় পরিবহনশ্রমিককে আটক করে র্যাব।
এসব ঘটনায় সার বহনকারী গাড়ির চালক ও তাঁর সহযোগীরা গ্রেপ্তার হলেও নেপথ্যের হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা।
গত বছর ১৭ অক্টোবর প্রথম আলোয় বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) আমদানি করা ৬২০ কোটি টাকার সার গুদামে পৌঁছে না দিয়ে ‘আত্মসাৎ’ করার খবর ছাপা হয়েছিল। মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, এসব সার ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে খালাস হয়। বিসিআইসি বারবার তাগাদা দিলেও ৬৪ হাজার টন সার সরকারি গুদামে পৌঁছায়নি পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি; যার দাম ৪৩৮ কোটি টাকা।
দেখার বিষয়, পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোর আত্মসাতের পেছনে বিসিআইসির কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশ ছিল কি না।
সারের বিপণনটি পুরোপুরি সরকার তথা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের এখতিয়ারভুক্ত। দেশে উৎপাদিত কিংবা আমদানি করা সার বিক্রির জন্য তারা ডিলার নিয়োগ করে থাকে। ফলে খোলাবাজারে সার কেনাবেচার সুযোগ নেই। বাস্তবতা হলো ডিলারের কাছে কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সার পান না। অথচ খোলাবাজারে বেশি দাম দিয়ে তঁাদের সার কিনতে হয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে কৃষি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করে থাকেন কৃষকেরা। কৃষির উন্নতির পেছনে সরকারের সহায়ক কর্মসূচি ও কৃষিবিজ্ঞানীদের নতুন নতুন গবেষণারও গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। সরকার কৃষককে সাশ্রয়ী দামে সার, বীজ সরবরাহ ও সেচের ব্যবস্থা করে থাকে। বর্তমানে বেশির ভাগ কৃষিজমিই সার ও সেচের আওতায়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফসল পেতে হলে সময়মতো সার ও সেচ দিতেই হবে।
উদ্বেগের বিষয় হলো সার ও সেচ কৃষককে প্রতিবছরই ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। বেশি দামে সার কিনতে হলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে। উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক সময় কৃষক কম সার ব্যবহার করেন এবং কাঙ্ক্ষিত ফসল পান না।
এই দুষ্ট চক্রের হাত থেকে কৃষককে রক্ষা করতে হলে সরকারকে নিয়মিত সার সরবরাহ ও ডিলারদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই। খোলাবাজারে সার বিক্রি ও চট্টগ্রামে আমদানি করা সার আত্মসাৎ ও খোলাবাজারে সার বিক্রির প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এখানে দায়মুক্তির সুযোগ নেই।