আর কত দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে

সম্পাদকীয়

আমাদের সড়ক উন্নয়নের পরিকল্পনায় জনবান্ধবের বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থাকে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণেই হয়তো সেখানে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি কম গুরুত্ব পায়। ফলে এ দেশের সড়কগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়েছে একেকটা মরণফাঁদ। যেমনটি আমরা দেখছি রাজশাহী নগরের একটি সড়কের ক্ষেত্রে। ঘন ঘন দুর্ঘটনার কারণে নিয়মিত হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সড়কটিতে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ।

রাজশাহী নগরের ছোট বনগ্রাম এলাকার ওই সড়ক মূলত একটি মোড়, যেটি ‘বারো রাস্তার মোড়’ নামে পরিচিত। চারটি বড় সড়ক ওই মোড়ে মিলিত হয়েছে। ঘন ঘন দুর্ঘটনার জন্য ‘কুখ্যাত’ হয়ে ওঠা মোড়টিকে এলাকাবাসী নাম দিয়েছেন ‘মরণ রাস্তার’ মোড়। গত এক মাসে সেখানে ছোট-বড় অন্তত ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার মোটরসাইকেলে করে মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে ওই মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক পুরনজিত মহলদার।

গত শুক্রবার এলাকাবাসী মোড়টিতে দ্রুত একটি গোলচত্বর করার দাবি জানিয়ে মানববন্ধনও করেন। মোড়ে দুর্ঘটনার একাধিক ছবি দিয়ে সেই কর্মসূচির ব্যানার ও ফেস্টুন বানিয়ে ঝুলিয়ে দেন। তাঁদের দাবির মুখে গত শনিবার থেকে মোড়ে একজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যকেও রাখা হয়। এসবের মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান পুরনজিত মহলদার।

একটি মোড়ে এভাবে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে এবং এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে, বিষয়টি আসলে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এলাকাবাসীর বক্তব্য, ওই রাস্তা দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চালান চালকেরা। রাত-দিন বালুর ট্রাক চলে। এলাকার রাস্তাজুড়ে বালুর স্তূপ আছে। এসবের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। এর আগে আরেক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক হাসান আহমদ বলেন, ‘ওই রাস্তায় খুব বেশি গাড়ি চলে না। মোড়টা ভিজিবল নয়। একদিকের গাড়ি অন্যদিকে দেখা যায় না। এ জন্য বোধ হয় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। ওই মোড়ে দ্রুত কোনো সিস্টেম ডেভেলপ করা দরকার। পাশাপাশি একজন নয়, অন্তত দুজন ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া দরকার।’

মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার মো. নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ওই জায়গায় তো ট্রাফিক পুলিশ রাখাটাও ঝুঁকিপূর্ণ।’ আরেকজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারও বক্তব্য, ‘এ রকম মোড় চাকরিজীবনে আর একটিও দেখিনি।’ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, সেখানকার ওই সড়কের মোড়ের নকশায় ত্রুটি আছে। ওই মোড়ের সড়কগুলো সিটি করপোরেশন ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ)। সিটি করপোরেশন জানাচ্ছে, রোড ডিজাইনের সংশোধন করা দরকার। সেটি তারা করবে।

আমরা চাই দ্রুত ওই মোড়কে ত্রুটিমুক্ত করা হবে। গোলচত্বর ও গতিনিয়ন্ত্রক নির্মাণ কতটা কার্যকর হবে, সেটিও বিবেচনায় আনা হবে। ওই মোড়ে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটুক, সেটি আর আমরা দেখতে চাই না।