ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের ৫০ লাখের বেশি মানুষ। উদ্ধার তৎপরতাসহ গোটা দেশের মানুষ ত্রাণসহায়তা নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কাজ করছে সরকার, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ সব নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু যে পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহ হয়েছে, তা বিতরণে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। ফলে অনেক প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।
বন্যার কয়েক দিন হয়ে গেলেও অনেক দুর্গম ও প্রত্যন্ত গ্রামে এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। অনেক জায়গায় এখনো প্রবল স্রোত ও পানি থেকে গেছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় কোথায় কোন গ্রামে মানুষ আটকে আছেন, না খেয়ে আছেন, তা জানতে খুব অসুবিধা হয়। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও বন্যায় ডুবে গেছে। সেখানে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। রাস্তায় ত্রাণের গাড়িগুলোও অনেক ঘণ্টা ধরে আটকে থাকে। অনেকে সড়কের আশপাশে ত্রাণ বিতরণ করেই ফিরে আসছেন। চার দিন পর মহাসড়কটির দুই পাশে যান চলাচল শুরু হলেও গতি ছিল কম।
সরকারি-বেসরকারিভাবে বিপুল ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়েছে, সেসব বিতরণও করা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে সেসব ত্রাণ দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছানো নিয়ে। ফলে অনেক মানুষ খাদ্যসংকটে আছেন। সেখানে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন। এখন তাঁদের কাছে দ্রুত খাবার পৌঁছাতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে সহায়তা পৌঁছায়নি বলেও জানা যাচ্ছে।
দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আগের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে, এমন পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ একাধিকবার ত্রাণ পান, অনেকে বঞ্চিত হন। ফলে এখানে প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কোন কোন গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কোন গ্রামে বা এলাকায় আগে ত্রাণ পাঠাতে হবে, সেসব তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে সহজে জোগাড় করা সম্ভব। প্রতিটি উপজেলায় ত্রাণ বিতরণের একটি কেন্দ্র খোলা যেতে পারে, যেখানে সব ধরনের ত্রাণ এসে জমা হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ও এলাকাগুলোতে ত্রাণগুলো পৌঁছে যাবে।
ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি কিছু দল ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধি থাকতে পারেন। পাশাপাশি সারা দেশ থেকে ত্রাণ সংগ্রহে বড় বড় পক্ষের প্রতিনিধিও এখানে যুক্ত থাকতে পারেন। আর পুরো বিষয়টি তদারক করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
কথা হচ্ছে যেভাবেই হোক, সুশৃঙ্খলভাবে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রমটি পরিচালনা করতে হবে।