মুঠোফোন নম্বর প্রতারকের কাছে কীভাবে যায়

সম্পাদকীয়

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে ৪ কোটি ১৭ লাখের বেশি মানুষ। জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশে কাজ করা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার যৌথ জরিপ বলছে, এ মুহূর্তে দেশের ২৬ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। খাদ্য অধিদপ্তর ও টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে মানুষের দীর্ঘ সারি প্রমাণ করে সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ কতটা কষ্টে জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাধীন সুবিধাভোগীদের সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

সরকারের যে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, সেখানে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর বিশেষ গোষ্ঠী, শিক্ষা প্রতিবন্ধী ও সমতলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ভাতা পান। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হলেও এ ভাতা দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা সুরক্ষা দেয়। কারণ, এ টাকা দিয়েই অনেকে হাঁস–মুরগি পালন করে কোনোমতে সংসার চালান। অন্ধের যষ্টির মতো তাঁদের সেই ভাতাটা যদি ডিজিটাল প্রতারকেরা প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নেয়, এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কিছু হতে পারে না।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় গত কয়েক দিনে প্রতারক চক্র অন্তত ১ হাজার ৩৫০ ভাতাভোগীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে এ ভাতা দেওয়া হয়। মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের মাধ্যমে ভাতাভোগীরা টাকা পেয়ে থাকেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাঁদের মুঠোফোনে কল দিয়ে ‘সমাজসেবা অফিস থেকে বলছি, অন্তর্বর্তী সরকার আপনার ভাতার তথ্য যাচাই-বাছাই করছে,’ এমন কথা বলে প্রতারকেরা মুঠোফোনের গোপন নম্বর নিয়ে টাকা তুলে নিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সরকারি লোকজন এর সঙ্গে জড়িত।

সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, ভাতাভোগী ব্যক্তিদের সব তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে রয়েছে। এ ছাড়া যে কোম্পানি টাকা পাঠায়, তাদের কাছেও আছে মুঠোফোন নম্বর। ভুক্তভোগীদের সচেতন করার পাশাপাশি মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে।

শুধু বাগমারায় নয়, সারা দেশেই গরিব ও প্রান্তিক মানুষ এমন ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ভাতাভোগীদের মুঠোফোন নম্বর কীভাবে প্রতারক চক্রের হাতে চলে যায়? বাগমারায় যেটা ঘটেছে, সেটা এককথায় ডিজিটাল গণপ্রতারণা। ভাতাভোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রতারক চক্রের হাতে চলে যাওয়ার পেছনে নিশ্চিত করেই যোগসাজশ রয়েছে। সামান্য কয়েক শ টাকার ভাতা বলে এটিকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় অবশ্যই আনতে হবে। শুধু সচেতনতা তৈরি আর মুঠোফোন নম্বর বদলে ডিজিটাল এই প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়।