করোনা মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দাবি উঠেছিল সর্বমহল থেকে। কিন্তু মহামারির আগে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে চিত্র ছিল, এখনো তেমনটিই রয়ে গেছে। সন্দেহ নেই, বরাদ্দের অঙ্কে ও প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য খাতে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে। চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীসহ বিপুল জনবল নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, অবকাঠামোগত প্রকল্পকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বেশি এবং অনেক জায়গায় পড়ে আছে বিশাল বিশাল ভবন। আর চিকিৎসকের পদও শূন্য হয়ে আছে অনেক জায়গায়। দামি দামি চিকিৎসাসরঞ্জাম ও অ্যাম্বুলেন্স দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো হলেও সেগুলো বিকল বা পড়ে আছে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শেরপুর সদর হাসপাতালে। এ কারণে সেখানে সাধারণ রোগীদের দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে এবং চিকিৎসাসেবার জন্য তাদের ব্যয়ও বাড়ছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের ওপর জেলার ১৫ লাখ মানুষ ছাড়াও পাশের জামালপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার কয়েকটি উপজেলার মানুষ এটির ওপর নির্ভরশীল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে চার বছর আগে হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে ১০০ শয্যার কাঠামো অনুযায়ী। অনুমোদন হয়ে থাকা চিকিৎসকের ৫৭টি পদের ৩০টিই শূন্য। ফলে বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে এলে রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। শয্যার তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি থাকায় অনেকে বারান্দা ও মেঝেতে থাকেন। প্রায়ই বিকল হয়ে যায় নয়তলাবিশিষ্ট ভবনের লিফট। শুধু চিকিৎসকের পদ নয়, অন্যান্য সব পদে জনবলসংকট। এ জন্য হাসপাতালটিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
একই চিত্র দেখা যাচ্ছে, তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্ষেত্রেও। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট থাকলেও ২০০৬ সালে তা ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে ১০ জন বিশেষজ্ঞসহ ২৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু আছেন মাত্র ১১ জন। এর মধ্যে সাতজনই ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো থেকে সংযুক্ত করা। এ ছাড়া সেখানকার এক্স-রে যন্ত্রটি বিকল হয়ে পড়ে আছে সাত বছর ধরে। কারণ, সেটি চালানোর অপারেটর নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। চালক না থাকায় প্রায় এক বছর ধরে পড়ে আছে দুটি অ্যাম্বুলেন্স।
দেশের নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার সবকিছুই করছে, কিন্তু নানা অব্যবস্থাপনা, অবহেলা, সমন্বয়হীনতার কারণে এর সুফল পাচ্ছে না জনগণ।ফলে আয়ের বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে পরিবারের চিকিৎসা বাবদ।একই সঙ্গে সব হাসপাতালের চিত্র হয়তো বদলে ফেলা সম্ভব নয়। আমরা আশা করব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দুটি হাসপাতালের প্রতি সদয় হবে।দ্রুত সেগুলোর জনবলসংকট ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান করবে।