রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন কারা চালায়—হল প্রশাসন, না ছাত্রলীগ? প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ শতাধিক আসন ছাত্রলীগের দখলে’ শিরোনামের খবরটি পড়ে এই প্রশ্নই ওঠে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ১১টি আবাসিক হলে আসন আছে ৫ হাজার ৩৮৩টি। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক আসন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পাঁচ হাজার আসনের মধ্যে পাঁচ শতাধিক আসনই যদি ছাত্রলীগের দখলে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য বিদায় নেওয়ার আগের দিন বিশেষ বিবেচনায় ছাত্রলীগের নেতাদের চাকরি দিয়ে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগে কি কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী নেই যে বিশেষ বিবেচনায় চাকরি দিতে হবে?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছাত্রের সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৬৯। তাঁদের জন্য হল আছে ১১টি। প্রতিটি হলেই যে কটি আসন আছে, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ তার চেয়ে কম। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কিছু আসন সব সময়ই দখল করে রাখেন। ফলে হল প্রশাসনের কিছু করার থাকে না।
হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, আসন খালি হলেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ছাত্রলীগের নেতারা তাঁদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের আসনে তুলে দেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হল প্রশাসনের মাধ্যমে ওঠা শিক্ষার্থীকে আসন থেকে নামিয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসনে এই জবরদস্তি কত দিন চলবে?
আসন দখলে রাখার পক্ষে ছাত্রলীগের নেতারা যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তা-ও হাস্যকর। সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ইসলাম বলেন, হলের প্রাধ্যক্ষ বিএনপিপন্থী হওয়ায় ছাত্রলীগের কোনো কর্মীকে আবাসিকতা দেন না। এ জন্য তাঁরা সংগঠনের কর্মীদের হলে উঠিয়েছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে একজন প্রাধ্যক্ষ ছাত্রলীগের কর্মীদের হলে আসন দেবেন না, এটা অবিশ্বাস্য। হল প্রশাসন মেধার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ করে থাকে।
এখানে ছাত্রলীগের কিছু করণীয় নেই। তাঁরা যদি মনে করেন হল প্রশাসন ছাত্রলীগ কর্মীদের অন্যায্যভাবে হলে আসন দেওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চাইতে পারতেন। সেসব না করে ‘প্রতিকার’ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন।
অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য আছে। এমনকি বিভিন্ন হলে তারা গেস্টরুম প্রতিষ্ঠা করে সেখানকার শিক্ষার্থীদের ওপর নানা রকম হয়রানি ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগও আছে। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থক এই ছাত্রসংগঠনের দৌরাত্ম্য সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এখানে ছাত্রলীগের কর্মীরা হলে বরাদ্দ পাওয়া সাধারণ শিক্ষার্থী বা অন্য সংগঠনের শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওঠানোর গুরুতর অভিযোগ আছে।
ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষকদের অভিভাবকেরাও আন্দোলন করেছিলেন। এসব আন্দোলন যখন জোরদার হয়, তখন ছাত্রলীগ কিছুটা সমঝে চলে। কিন্তু আন্দোলন স্তিমিত হলেই তারা আবার স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে এই উপদ্রব-অত্যাচার কেন ভোগ করবেন? এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তারা যদি সত্যিকারভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হয়ে থাকে, তাহলে তাদের উচিত হবে এ বিষয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। হল প্রশাসন যাদের নামে আসন বরাদ্দ করেছে, কেবল তারাই হলে থাকবে। অন্য কারও খবরদারি কিংবা আসন–বাণিজ্য সেখানে চলতে পারে না।