বীজ ও সার সরবরাহ নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়

বন্যার পর দুর্গত এলাকায় অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। যেমন বন্যার কারণে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়। আবার নতুন করে কৃষি উৎপাদন নিয়েও দুশ্চিন্তা তৈরি হয় কৃষকদের। বীজ ও সার কোথা থেকে পাবেন, এ নিয়ে দরিদ্র কৃষক ও বর্গাচাষিরা অনিশ্চয়তায় পড়েন। ফলে সাম্প্রতিক বন্যার পর এখন কৃষি পুনর্বাসন নিয়ে দ্রুত মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে।

এবারের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সমতল থেকে পাহাড় পর্যন্ত ২৩ জেলার উৎপাদিত ফসল এবং ১৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, আউশ ও আমন ধান, শাকসবজি, ফলের বাগানসহ ৯ লাখ ৮৬ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ধানের উৎপাদনে। আমনের আবাদ ও বীজতলার যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যেত, যা পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে গেছে। এক লাখ মেট্রিক টন আউশ ধানের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে ২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকার ধানের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কৃষি পুনর্বাসন। যে কারণে ফসল নষ্ট হওয়া জমিগুলো দ্রুত চাষের আওতায় আনতে কাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। এর মধ্যে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন দেশের বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সহায়তায় বীজ সংগ্রহ করছেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা মাঠে শুরু হয়েছে আমন ধানের বীজতলা তৈরির কাজও। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

বন্যায় অনেক মাছের খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একেকটি জেলায় ক্ষতির পরিমাণ কয়েক শ কোটি টাকা। খামারিদের কথা চিন্তা করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উদ্যোগ নিয়েছেন মাছের পোনা উৎপাদনের। এসব খবর দারুণভাবে আমাদের আশাবাদী করে তোলে। কিন্তু কৃষকদের কাছে দ্রুত ও যথাযথভাবে বীজ ও মাছের পোনা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। দুর্গত কৃষকদের সবার একটিই কথা, ‘আমাদের আর কিছু দিতে হবে না। নতুন করে চাষ করতে বীজ দেন। গায়ে খেটে কাজ শুরু করব।’

শুধু বীজ ও মাছের পোনা নয়, সরকারকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সাশ্রয়ী মূল্যে কীভাবে কৃষকের কাছে সার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। অনেকের হাঁস-মুরগি ও গরুর খামার পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক বন্যাদুর্গত এলাকায় কোনো গবাদিপশু নেই, সব পানিতে ভেসে গেছে। খামারি কৃষকদের কথাও ভাবতে হবে সরকারকে। প্রণোদনা বা স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে কৃষক ও খামারিদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে হবে।