স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হোক

সম্পাদকীয়

নওগাঁয় কৃষিজমি নষ্ট করে একের পর এক করা হয়েছিল পুকুর। পরিবেশ আইনে এটি করার কোনো সুযোগ নেই। এ নিয়ে আমরা প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করি। স্থানীয় প্রশাসন সেসব পুকুর খননের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আইনবিরোধী এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সদ্য বিগত হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের নেতা–কর্মীরা। এ ছাড়া সেখানে সরকারিভাবে লিজ নেওয়া পুকুরগুলোও ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের অধীন। এখন ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পরিবর্তনের পর নওগাঁর সেই পুকুরগুলো লুটে নেওয়া শুরু করেছে আরেকটি পক্ষ। অধিকাংশ ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এটি কোনোভাবে কাম্য ছিল না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানায়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরপরই নওগাঁয় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ নওগাঁর অন্যান্য সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে থাকা সরকারি পুকুরের মাছ লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ক্ষমতার পালাবদলের পর দেশে নানা জায়গায় যে লুটপাট শুরু হয়েছে, তা কোনোভাবে কাম্য ছিল না। অন্যান্য জায়গার মতো নওগাঁয়ও এসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে উঠে আসছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নাম। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল, সেটিও যদি বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠে, তা খুবই হতাশাজনক। অন্যায়-অনাচারের পুরোনো সংস্কৃতি থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে সারা দেশের মতো এ জেলারও কোনো থানা-পুলিশই কাজ করছে না। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা দখল ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও তাদের পক্ষে এত বড় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ কাজে ফিরলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে প্রতিকার পাবেন বলে আশা করছি।’

থানা-পুলিশ কাজ করছে না, এটি সত্য। পুলিশকে যেভাবে ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমনে ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের ওপর মানুষ এখন ক্ষুব্ধ। ফলে পুলিশও চরমভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে পুলিশ থানাগুলোতে যাচ্ছে। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসনকেও উদ্যোগ নিতে হবে। জেলার আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে রাজনৈতিক দল ও সচেতন মহলের সঙ্গে আলোচনা করেও তিনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। আশা করি, জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক হবে।