দুর্যোগ–পরবর্তী রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে হবে

সম্পাদকীয়

দেশের পূর্বাঞ্চলে স্মরণকালের রেকর্ড বন্যা দেখলাম আমরা। ১১টি জেলার ৭৭টি উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে ১০ লাখের বেশি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫০ লাখের বেশি মানুষ। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ অনেক জেলায় স্বাস্থ্যকাঠামোগুলোও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায়। অনেক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া দুরূহ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিয়মিত চিকিৎসাসেবা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বন্যার কারণে সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি বন্যার কারণে অনেক মানুষ, বিশেষ করে শিশু-বৃদ্ধ নতুন করে রোগশোকে আক্রান্ত হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা কঠিন সমস্যার মুখে পড়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি অনেক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে অসহায় পড়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে অনেককে। বৃষ্টি ও পানিতে কাপড় ভিজে অনেকের সর্দি-কাশি হয়েছে। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের চারদিকে বুক সমান পানি থাকায় চিকিৎসা নেওয়া বা ওষুধ সংগ্রহের জন্য বেরও হওয়া যাচ্ছে না।   

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রত্যন্ত এলাকায় কমিউনিটি হাসপাতালগুলো পানিতে ডুবে গেছে। ওষুধপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও উপজেলা হাসপাতালেও জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার পরিবেশ নেই। তবে ফেনী সদর হাসপাতালে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এটি আশাব্যঞ্জক যে পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর সেবা চালু হয়েছে। কিন্তু গ্রামগুলোতে কোনো চিকিৎসক দল যায়নি।

ফেনী জেলার সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন বলেন, পানি বেশি হওয়ার কারণে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে ইতিমধ্যে ছয় উপজেলায় ছয়টি জরুরি দল গঠন করা হয়েছে। ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বিশেষজ্ঞ দল ফেনীতে এসেছে। পানি নেমে গেলে স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে সেবা দেওয়া হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, দুর্গত এলাকায় চিকিৎসাসেবায় চালু রয়েছে ৭৬৯টি টিম। আমরা জানি, বন্যা আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তবে ৫০ লাখ বন্যা আক্রান্ত মানুষের বিপরীতে স্বাস্থ্যসেবার টিম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি যেসব এলাকায় পানি নেমে গেছে, সেখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও দ্রুত চালু করতে হবে। বন্যা–পরবর্তী সময়ে রোগের প্রাদুর্ভাব প্রকট হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। আমরা আশা করব, সমতল থেকে পাহাড়ে বন্যা আক্রান্ত সব এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখবে।